নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২২ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সামাজিক সন্ত্রাস ও আধিপত্য বিস্তারের লড়ায়ে প্রাণহানির খবর মানুষের কাছে ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। পান থেকে চুন খশলেই ঢাল-সড়কি নিয়ে প্রতিপক্ষের উপরে হামলা করা যেন একটি ট্রেন্ড তৈরি হয়ে পড়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে শান্তি সমাবেশ, আইন-শৃঙ্খলা সমাবেশ করেও প্রতিকার হচ্ছিল না। ২০২২ সালের ২২ আগস্ট ঝিনাইদহে পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করেন মোহম্মদ আশিকুর রহমান বিপিএম, পিপিএম(বার)। তিনি যোগদানের পরেই শৈলকুপায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি মন্দিরে হামলার ঘটনায় তিনি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সামাজিক সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। উপজেলায় পুলিশের তৎপরতায় কমে এসেছে সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ। প্রায় ১১ মাস সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে এই উপজেলায় ঘটেনি কোন প্রাণহানি। এটা যেন উপজেলার মানুষের কাছেই আশ্চর্য্য মনে হয়। পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান অত্যন্ত সততার সাথে রিক্রুটিং কনস্টেবল পদে নিয়োগ সম্পন্ন করেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এদিকে, ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি শৈলকুপা পৌর এলাকার কবিরপুর এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ভাই লিয়াকত হোসেন বল্টুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আধিপত্য বিস্তারের জেরে, ২০২২ সালের ৩০ জুলাই পুরাতন বাখরবা গ্রামের ইবাদত শেখের ছেলে জানিক শেখ প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয় তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেলে ভর্তি করা হলে ৩১ জুলাই ভোরে তার মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি উপজেলার সারুটিয়া গ্রামের দবির উদ্দিন শেখের ছেলে মেহেদী হাসান স্বপন(২৫) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০২০ সালের ১৭ মে উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের হড়লা গ্রামের নজির জেয়ার্দ্দার(৫০) কে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি বগুড়া ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় কল্লোল খন্দকার(৩৮) নামে একজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০২২ সালের ৮ আগষ্ট উপজেলার শেখড়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জেরে ৪০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় এই ঘটনায় আহত হয় ১০ জন। ২০২২ সালের ২৯ মে নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের বুড়ামারা গ্রামে ২০টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয় লুটপাট করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই রাতে উপজেলার কামারিয়া গ্রামের ৬টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ২০২২ সালের ১৫ মে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয় নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের বিবাদমান ৩২ জন। এদিকে ২০২২ সালের শেষের দিক থেকে ঝিনাইদহ আদালতে শৈলকুপার বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলায় একের পর এক রায় ঘোষণা হতে থাকে। ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ তিন ভাগ্নে-ভাতিজাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় একজনের মৃত্যুদ-, ২০২২ সালের ১৭ আগষ্ট শিক্ষক হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদ- এরকম রায় আসতে শুরু করে। পুলিশ উপজেলায় সামাজিক দাঙ্গা সংঘটিত হওয়ার সুযোগ না দেওয়াই ধিরে ধিরে শান্ত হচ্ছে শৈলকুপা উপজেলা। শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঝিনাইদহের বিজ্ঞ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমানের সরাসরি তদারকিতে শৈলকুপা উপজেলায় আমরা আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগের থেকে অনেক শান্ত হয়েছে। গত ১১ মাসে পারিবারিক কারণ ও দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সামাজিক আধিপত্য বিস্তার, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও রাজনৈতিক সহিংসতা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা হয়েছে। থানায় মামলার সংখ্যাও কমে এসেছে। এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। শৈলকুপা মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সাংবাদিক এনায়েত হোসেন, এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো আছে। এখন শৈলকুপা থানায় মামলা দায়ের, অভিযোগ দায়েরের সংখ্যাও অনেক কম। আমরা চাই শান্ত পরিবেশ বজায় থাকুক, মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। শৈলকুপা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল হাসান মুসা বলেন, এবার কুরবানি ঈদে শৈলকুপায় কোন মানুষের জীবন কুরবানি হয়নি। রক্তহীন কয়েকটি ঈদ কাটলো শৈলকুপায়। পারিবারিক ও বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা এর মধ্যে ঘটেছে তবে সামাজিক সংঘর্ষ অনেকটায় নির্মূল হয়েছে। আমরা চাই সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের সংঘর্ষ চিরতরে নির্মূল হোক। মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসনে পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তবে মাদক নির্মূলেও উপজেলায় পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে।