নিজস্ব প্রতিবেদক-
ঝিনাইদহে বিভিন্ন নামে বেনামে ফেক আইডি খুলে নিজের স্ত্রীসহ বিভিন্ন নারী-পুরুষের অশ্লীল ছবি ও অশ্লীল কথা লিখে সামাজিক গণমাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে একেরপর এক সম্মান হানী করে চলেছে বলে জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ইসমাইল হোসেন (৩৩) নামে এক যুবকের নামে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার গুলো একেরপর এক থানা পুলিশ করেও কোন প্রতিকার মিলছেনা বলে সাংবাদিকদের জানান ঐ ভুক্তভোগীরা।অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন উপজেলার ফয়েলা গ্রামের (গোরস্থান পাড়া) ইব্রাহিম শেখের ছেলে।
জানা গেছে, গত ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার শিশার কুন্ডু গ্রামের মোঃ খোরশেদ আলমের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তন্বীকে বিয়ে করেন ইসমাইল হোসেন।বিয়ের আগে পরিবারের লোক ইসমাইল হোসেনকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বলে পরিচয় দিলেও বিয়ের পরে তার ব্যত্যয় ঘটে।
ইসমাইল হোসেনের শশুর খোরশেদ আলম জানান, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পর জানতে পারি যে, ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার নয়। বরং এলাকায় তাকে মাদক সেবনকারী ও মাদক ব্যবসায়ী বলে জানেন।এ পরিচয় জানার পর আমার মেয়ে মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং মাদকের সাথে না জড়ানোর জন্য নিষেধ করলে, বিভিন্ন সময় তার উপর অত্যাচার চালায়। খোরশেদ আলম আরও জানান, এ বিষয়ে আমার মেয়ে তার শশুর শাশুড়ীকে জানালে তারাও অশ্লীল কথাবার্তা বলতে থাকে। এমতবস্তায় আমার মেয়ের সাথে সম্পর্কের কিছুটা টানপড়ান দেখা দিলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর অভ্যন্তরীণ ভিডিও ধারণ করে এক সিঙ্গাপুর প্রবাসীর কাছে পাঠিয়ে দেয় ইসমাইল।এহেন ন্যাকারজনক কাজের কথা জানতে পেরে ইসমাইলের (জামায়) বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করি।এ অভিযগের ভিত্তিতে পরবর্তিতে এমন ঘটনা আর না করার নিমিত্তে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিষয়টা মীমাংসা করে দেন।
খোরশেদ আলম আরও জানান, কালিগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিষয়টা মীমাংসা হয়ে যাওয়ার পর আমার মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে যায় ইসমাইল। সেখানে কিছুদিন থাকার পর আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠে ইসমাইল। শুরু হয় তন্বীর উপর অমানুষিক নির্যাতন।চেষ্টা চালানো হয় হত্যার। তিনি বলেন, এক পর্যায় আমার মেয়ে ইসমাইলের কাছে নিজেকে আর নিরাপদ মনে না করে আমাদের বাড়িতে চলে আসে। পরে ইসমাইলের হাত থেকে বাচতে, গেলো বছরের ১৬ই মে আমার মেয়ে ঝিনাইদহ কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। তাছাড়া আমি নিজে বাদি হয়ে মেয়েকে হত্যা প্রচেষ্টার একটি মামলা করি। এই মামলা দায়ের করার পর সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে ফেসবুকে কোটচাঁদপুরের সমাচার নামে একটি ফেক আইডি খুলে সেখানে আমার ছবি দিয়ে অশ্লীল কথা লিখে পোস্ট দেয়। তাতে লেখা হয় “ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই এই জানোয়ারের ফাঁসি চাই নিজের কন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ খোরশেদ আলম”। বিসয়টি আমার নজরে আসলে ঐ আইডির নামে কোটচাঁদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
এদিকে খোরশেদ আলম আরও জানান, তার করা মামলার সাক্ষী হিসেবে প্রতিবেশি সুরুজ মিয়ার নাম দেওয়া হয়। যে কারণে কোট চাঁদপুর সমাচার নামে ঐ ফেক আইডি থেকে মামলার সাক্ষী সুরুজ মিয়ার মেয়েকে ঘিরে আরও একটি আপত্তিকর পোস্ট দেয় ইসমাইল।যে কারনে সুরুজ আলীর মেয়েকে মেরে তার স্বামী বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এতে সুরুজ আলী ক্ষিপ্ত হয়ে ইসমাইলের নামে ঝিনাইদহ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে্ন।
এছাড়াও আহসান নগর মসজিদের একজন ইমামের ছবি দিয়ে একটি ফেক আইডি তৈরি করে বিভিন্ন অশ্লীল পোষ্ট দেয় ইসমাইল। যা দেখে ঐ ইমাম সাহেবের প্রতি সাধারণ মানুষের বিরুপ মন্তব্যের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও খোরশেদ আলীর ছেলে শাহাদত হোসেন রিপনের ছবি ও নাম দিয়ে আরেকটি ফেক আইডি তৈরি করে কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান মিয়ার নামে আপত্তিকর পোস্ট দেয়। এতে শাজাহান মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে রিপনের বাড়িতে রাতে লোকজন পাঠায়। এই ঘটনা নিয়েও কোটচাঁদপুর থানায় একটি অভিযোগ করা হয়।ইসমাইলের এমন ফেক আইডি তান্ডবে ঐ এলাকার জনগন আতঙ্কিত ও সম্মান হানিতে ভুগছেন বলে তারা সাংবাদিকদের জানান। বিভিন্ন ভাবে থানা পুলিশ ও কোর্ট কাচারি করেও তারা ইসমাইলের এই সাইবার ক্রাইম থেকে তারা পাচ্ছেনা প্রতিকার।
এ বিষয়ে ইসমাইলের নিকট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে চাইলে তার মোবাইল নাম্বারটা বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ জানান, খোরশেদ আলমের করা ডায়েরির একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে।