নিজস্ব প্রতিবেদক-
আগামী জাতীয় নির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। সেলক্ষ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের আরও শক্তিশালী করে তুলতে দল পুনর্গঠনের কাজ জোরেশোরেই চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। নভেম্বর-ডিসেম্বরে মধ্যেই ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগ জেলা ও মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি চাঙ্গা করতে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে নতুন কমিটি গঠন করছে। দলকে শক্তিশালী করতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগও নিয়েছে দলটি। ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার নির্বাচন ও জেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটের খেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভাবনীয় বিজয় ও সাফল্য এবং আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থীদের পরাজয় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগকে ভাবিয়ে তুলেছে। আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থীদ্বয়কে হটিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভাবনীয় জয় ঝিনাইদহের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়েছে বলে মনে করেছেন মাঠ পর্যায়ের তৃনমূলের আওয়ামীলীগ। অন্যদিকে, পৌরসভার মতো জেলা পরিষদেও দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি! ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের “মুনাফিক ভন্ড দুনম্বরি রাজনীতিবিদ” এবং গ্রুপিং-লবিং নেতৃত্বের কোন্দল সমস্যাকে তাদের ভরাডুবির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পৌরসভা ও জেলা পরিষদের নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর জয়ের পেছনেও এই কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অ্যাডঃ আব্দুর রশিদ বিভিন্ন সমাবেশের অনুষ্ঠানে পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পরাজয়ের কারন হিসেবে জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিকট থেকে ব্যাপক অর্থ কেলেংকারি উপঢৌকন সুবিধা নিয়েছে তা তার বক্তৃতায় বলেছেন। পৌর ও জেলা পরিষদ দুটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকা প্রতীকের হার দলের গ্রুপিং ও সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতেই দীর্ঘবছর ধরে জেলা আওয়ামীলীগে চার/পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত দলটি। পৌর ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবির পেছনে আওয়ামীলীগের কয়েকটি গ্রুপে বিভক্তকেই মুখ্য হিসেবে দেখছেন নেতা-কর্মিরা। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপি গ্রুপ,সাধারন সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু গ্রুপ, তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমি এমপি গ্রুপ,আনার এমপি গ্রুপ ও জীবন গ্রুপ,কনক কান্তি গ্রুপের মধ্যে সমন্নয়হীনতা ও অন্তর্দ্বন্দ্ব দুটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পরাজয়ের অন্যতম বড় কারণ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গণমানুষের সৎ রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নেতৃত্বে গণমুখী দল হিসাবে ক্লিন ইমেজে নিয়ে আসতে হলে ভোগবাদী, লুটেরা চরিত্রগুলো সরিয়ে আদর্শিক সৎ নেতৃত্ব মাঠ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান আদৌ সম্ভব নয় বলে জানান মাঠ পর্যায়ের কর্মিরা এবং এ জেলার দ্বায়িত্বে নিয়োজিত কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতাদেরকে এটিই আজ বিবেচনায় নিতে হবে। ত্যাগি ও তৃনমূলের নেতা-কর্মিদের প্রত্যাশা এবং আওয়ামীরীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সম্মেলনের ম্ধ্যমে যোগ্যতা অনুযায়ী দলীয় পদ-পদবিও পুনর্বণ্টন হবে। বিগত ২০১৫ সালের ২৫মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ও আলহাজ্ব সাইদুল করিম মিন্টু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে সকল জল্পনা-কল্পনা পেছনে ফেলে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হবে-এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মিরা। জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ দুটি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন নবীন-প্রবীণসহ অনেক নতুন মুখ। আগামী কাউন্সিলকে ঘিরে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য জেলা আ‘লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি, জেলা আ‘লীগের বর্তমান যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, জেলা আ‘লীগের বর্তমান যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ আক্কাচ আলী,বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক অশোক ধর ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহামুদুল ইসলাম ফোটন এর নাম শোনা যাচ্ছে।তৃনমূলের নেতা-কর্মিরা মনে করছেন, এবারের জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুই একজন নেতা ধীরে ধীরে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠছেন।যেমন হয়েছিলেন সাইদুল করিম মিন্টু।এছাড়া সভাপতি পদের জন্য একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও তাঁদের মধ্যে বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই এমপি,বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ঝিনাইদহ ২আসনের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপু, সহ-সভাপতি ও সাবেক সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ আজিজুর রহমান,সহ-সভাপতি ও ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী জোর্য়াদ্দার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ আব্দুর রশিদ এর নাম শোনা যাচ্ছে।সভাপতি পদে সর্বমহলে আরো একটি নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হলেন, ঝিনাইদহ জেলার শ্রেষ্ট দানবীর জাহেদী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি সমাজ সংস্কারক ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল।প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে ক্লিন ইমেজের সৎ ত্যাগী ও দক্ষ নেতৃত্ব চাই তৃনমূলের কর্মিরা।জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের সক্রিয়তা ক্রমশ বাড়লেও পিছিয়ে পরেছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় ঝিমিয়ে পরার অভিযোগ রয়েছে জেলা যুবলীগ,জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ,জেলা যুব মহিলা লীগ,শ্রমিক লীগ,কৃষকলীগ,জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ,জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদ,জেলা তাতীলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনগুলোর। তৃণমূলকে সুসংগঠিত, সংগঠন পুনর্গঠন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান মাঠ পর্যায়ের ত্যাগি কর্মিদের।