খালাতো ভাইয়ের কাছ থেকে জমি কিনে শোকে শোকেই মারা গেছেন মুজিবর! জমি বিক্রির ২৫ বছর হয়ে গেলেও রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেনা শান্তী সরদার!
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১০নং হরিশংকরপুর ইউনিয়নের পৈলানপুর গ্রামের শান্তি সরদার (৬০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করে নেওয়ার পরেও জমি রেজিস্ট্রি না করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, শান্তি সরদার ১৯৯৭ সালে ২৪৫ নং পৈলেনপুর মৌজার ৩৮৫ নং দাগ থেকে ১৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন একই গ্রামের মুজিবর রহমান মন্ডলের কাছে। সম্পর্কে তারা আপন খালাতো ভাই। তৎকালীন সময়ে বাড়ি করার উদ্দেশ্যে ১ হাজার টাকা শতক মূলে মুজিবর রহমান মন্ডল এই জমি ক্রয় করেন শান্তি সর্দারের কাছ থেকে। মৃত মজিবর রহমানের স্ত্রী জানান, কয়েক কিস্তিতে জমির টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, পাইকপাড়া গ্রামের মান্নান মাষ্টার, পৈলেনপুর গ্রামের দুলাল, দলিল লেখক আতর আলী সহ গ্রামের অধিকাংশ লোক অবগত আছেন যে, শান্তি সর্দার আমাদের কাছে জমি বিক্রি করেছেন কিন্তু রেজিঃ করে দিচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, শান্তি সর্দার যদি আমাদের কাছে জমি বিক্রি নাই করতো, তাহলে কি সেই জমির উপর আমাদের পাকা ঘর করতে দিতেন ?
এঘটনার বিষয়ে পাইকপাড়া গ্রামের মান্নান মাষ্টার প্রতিবেদক কে জানান, জমি বিক্রির টাকা মুজিবরের নিকট থেকে আমার সাথে নিয়ে একবার ২ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিল শান্তি সর্দার। তিনি হতবাক হয়ে বলেন, এই জমি ক্রয়ের অনেক দিন পর মজিবর মন্ডল মারা গেছে, কিন্তু শান্তি সরদার তার জমি লিখে দেয়নি এটাতো আমার জানা ছিলনা! পৈলানপুর গ্রামের দুলাল মন্ডল জানান, মুজিবর মন্ডল যখন বেঁচে ছিল তখন প্রায় সময় দেখতাম রাস্তায় রাস্তায় মানুষের হাত ধরে বলে বেড়াচ্ছে যে, শান্তি সরদার টাকা নিয়েও আমার জমি লিখে দিলো না, তোমরা একটু ওরে কও আমার জমিটা যেনো লিখে দেয়। পৈলানপুর গ্রামের মাতুব্বর আনোয়ার জোয়ার্দ্দার বলেন, শান্তি সরদার যে মুজিবর মন্ডলের নিকট জমি বিক্রয় করেছে এ কথা আমি কেনো গ্রামের সবাই জানে। তারপরও কেন লিখে দিচ্ছেনা কেনো সেটা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, শান্তি সর্দ্দার যদি জমি নাই বিক্রি করতো, তাহলে এতো বছর ধরে মুজিবরের ছেলেরা ঐ জমির উপর বসবাস করছেন কি করে?
বর্তমানে জমির উপর বসবাসকারী মৃত মুজিবর রহমান মন্ডলের দুই ছেলে শহিদুল ইসলাম ও মুকুল হোসেনের পরিবার জানান, প্রায় ২৫ বছর হয়ে গেলো শান্তি সর্দার আমাদের কাছে জমি বিক্রি করেছে। শান্তি সরদার এই জমি লিখে না দেওয়ায় শোকে শোকেই মারা গেছে আমার বাবা। বাবা মারা যাওয়ার পর আমরাও কতবার বলেছি জমিটা রেজিঃ করে দেওয়ার জন্য কিন্তু এখন সে অস্বীকার করছে যে, আমি তোমার বাবার কাছে জমি বিক্রি করি নাই। তারা বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখলাম এই জমি শান্তি সর্দারের বোনদের নামে রেকোর্ড হয়েছে। মূলত শান্তি সর্দার আমার বাবার সাথে চিটিং করেছে। মুজিবর রহমানের স্ত্রী বলেন, কথা ছাড়াও জমির মূল্য বেশি দেওয়া হয়েছে কিন্তু শান্তি সরদার আরো বেশি টাকা দাবি করায় জমি রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেনা বলে আমার স্বামীর কাছে শুনেছিলাম। আমরা এখন অনিশ্চয়তায় ভুগছি।
রেজিস্ট্রি অফিস ঝিনাইদহের দলিল লেখক আতর আলী বলেন, ২ হাজার সালের জানুয়ারির দিকে এই জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য দলিল লেখা শুরু করেছিলাম কিন্তু হঠাৎ তাদের মধ্যে কি হলো আর রেজিস্ট্রি করা হয়নি। সেই আংশিক লেখা দলিল টি এখনো মৃত মজিবরের স্ত্রী যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।
এ ঘটনা অস্বীকার করে শান্তি সরদার বলেন, আমি মুজিবরের কাছে জমি বিক্রি করিনি। তিনি বলেন, মজিবর আমার খালাতো ভাই। এক সময় মজিবরদের অনেক কিছু ছিল কিন্তু বর্তমানে ওদের কিছু নেই, যেকারণে ওদের বসবাসের জন্য আমি জমি দিয়েছি। আমি মজিবরের কাছে জমি বিক্রি করিনি।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি সেখ মোঃ সোহেল রানা জানান, এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
০ Comments