অনলাইন ডেস্ক-
ভারতে গিয়ে নিখোঁজের ছয় দিনেও ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের খোঁজ মেলেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পর গত ১৫ মে থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তার মুঠোফোনে স্বজনেরা যোগাযোগ করতে পারছেন না। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী ও রাজনৈতিক নেতা–কর্মীরা। এদিকে বাবার খোঁজে ভারতে যেতে এমপির মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গতকাল সোমবার ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আশা করছেন, মঙ্গলবার ভিসা পেতে পারেন। ভিসা পেলে ডরিন বাবার খোঁজে ভারত রওনা দেবেন।
এমপি আনার কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা জানার জন্য গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোডে সংসদ সদস্যের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অসংখ্য নেতা-কর্মী ভিড় জমান। বিভিন্ন স্থানে এমপির সুস্থতা কামনায় দোয়া প্রার্থনা করেছেন রাজনৈতিক শুভাকাঙ্ক্ষীরা। স্বজনরা ছাড়াও কাঁদছেন নেতাকর্মীরা।
কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম আনার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিন বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার খোঁজে ভারতে গেছেন বেশ কয়েকজন স্বজন। ভিসার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন মেয়ে ডরিন। গতকাল ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।
মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন সোমবার রাতে জানান, এখনও বাবার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমরা কলকাতা যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভিসা এবং কাগজপত্র প্রস্তুত হলেই কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখছেন এবং আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বলেন, গত ১২ মে দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারত যান এমপি আনার। সেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগর এলাকায় বন্ধু গোপালের বাড়িতে ওঠেন। ১৩ ও ১৪ মে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় সংসদ সদস্যের। তার পরদিন থেকে মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, স্পিকারের মাধ্যমে দ্রুত ভিসা পাওয়ার জন্য ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে আবেদন করেছি। দ্রুত ভিসা পেলে আমি এবং তার মেয়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হব।
এদিকে নিখোঁজ এমপির মোবাইল থেকে গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে তিনটি মেসেজ আসে। একই মেসেজ তিনজনকে দেওয়া হয় তার নম্বর থেকে। সংসদ সদস্যদের কলকাতার বন্ধু গোপাল, তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ও তার ভাগনির হোয়াটসঅ্যাপে একই মেসেজ আসে। এই মেসেজ নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। কারণ, ব্যক্তিগতভাবে সংসদ সদস্য এমনভাবে মেসেজ লিখতে পারেন না বলে জানিয়েছেন এমপির পিএস আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, আমি এমপি সাহেব বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে এমন মেসেজ কখনো লিখতে পারেন না। হয়তো অন্য কেউ তার মোবাইল থেকে এ মেসেজ লিখে দিয়েছে। এছাড়া মোবাইলে কথা না বলে মেসেজ দেওয়ার ঘটনা আরও রহস্য বাড়িয়ে দিয়েছে। মেসেজের বিষয়টি এমপি আনারের ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. তরিকুল নিশ্চিত করে জানান, তার মোবাইলে এমপি মেসেজ দিয়েছেন।
পরিবারের সন্দেহ এ বার্তা আনারের লেখা নয়। এ বিষয়ে এমপির মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, এই মেসেজ আমার বাবা লেখেননি। হয়তো অন্য কেউ বাবার মোবাইল থেকে লিখেছেন।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, পাঁচ দিন পার হয়ে গেল এমপির কোনো খবর পাচ্ছি না ভাই, কোথায় গেল, কী করছে, বেঁচে আছে কি—এসব চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে। ইন্ডিয়া তো ছোট দেশ না। কোথায় কী হলো বুঝতে পারছি না। আপনারা সবাই দোয়া করেন আমাদের এমপি যেন সুস্থ শরীরে ফিরে আসেন।
আনারের সন্ধান চেয়ে তার ভারতীয় বন্ধু কলকাতা নিউটাউন এলাকার গোপাল বিশ্বাস বরানগর থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেছেন। ভারতের পুলিশ জিডির ডদন্ত করছে। তারাও কিছু জানাতে পারেনি। ব্যারাকপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অনুপম সিং স্থানীয় বলেন, মিসিং ডায়েরি যেভাবে তদন্ত হয়, সেভাবেই তদন্ত চলছে। আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টি কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসকে জানিয়েছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সংসদ সদস্য আনার পুরনো মানুষ, একজন সংসদ সদস্য, বুঝে-শুনেই তো চলেন। পাশের দেশ ভারতে গেছেন। এমন তো না মায়ানমার গেছেন, যে মারামারি লেগেছে। আমার মনে হয় তিনি এসে পড়বেন। আমাদের এনএসআই কাজ করছে। ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।