ঝিনাইদহের অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের অন্যতম, অথচ ?

ডেস্ক নিউজ-

স্টিফেন হকিংকে ইংল্যান্ডবাসী সায়েন্স ফিকশন এর জন্য বিখ্যাত করে দিয়েছেন কিন্তু আমরা বাঙালীরা এতই অন্ধ এবং অথর্ব যে,জামাল নজরুল ইসলাম ভৌত বিজ্ঞানের উপর হালনাগাদ তথ্যসমৃদ্ধ সাতটি মৌলিক গ্রন্থ লিখলেও আমাদের চোখে পড়েনি। স্টিফেন হকিং যা করে বিখ্যাত হয়েছেন, জামাল নজরুল ইসলাম তার চেয়ে অনেক উচ্চমানের কাজ তিন বছর আগেই সম্পন্ন করে পুস্তকাকারে প্রকাশ করেছেন। হকিং তার বইয়ে জামাল নজরুল ইসলামের ঋণ স্বীকার করেছেন অকপট শ্রদ্ধায়। জামাল নজরুল ইসলামের সাতটি বই ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং সবগুলো বই হার্ভার্ড অক্সব্রিজ সহ পৃথিবীর শতাধিক প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। অথচ আমাদের ছেলেমেয়েরা তার নামটা পর্যন্ত জানেনা! শিশুপাঠ্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রত্যেক শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে স্টিফেন হকিংকে পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ তারচেয়ে মেধা–মনন, সৃষ্টি আর প্রজ্ঞায় অনেক শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের নামটি পর্যন্ত রাখা হয়নি। কেন রাখা হয়নি? কারণ তিনি বাঙালি। বাঙালিরা ব্যক্তি হিসাবে এতই হীনম্মন্য যে,স্বজনের খ্যাতি প্রচারকে অপমানজনক মনে করে। ইংরেজ বিজ্ঞানী হকিং কয়েকটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকে ইংল্যান্ড এমনভাবে তুলে ধরেছে –যার ফলে প্রকৃতপক্ষে কোনো মৌলিক বিষয় আবিষ্কার না করেই তিনি আমাদের দেশের বইপুস্তকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীতে পরিণত হয়েছেন, কিন্তু শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আমাদের দেশের জামাল নজরুল ইসলামের খোঁজ কেউ রাখেনি। এর চেয়ে বড়ো লজ্জা আর কি হতে পারে! বাঙালি চরিত্রকে জামাল নজরুল ইসলামের মূল্যায়নের প্রেক্ষাপটে এনে বলা যায় :

আপন ভাই মহাশয়,
এই জ্বালা কি প্রাণে সয়?

জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তখন সে শহরের মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জজের সমতুল্য) ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১ বছর তখনই তার বাবা কলকাতায় বদলি হন। জামাল নজরুল প্রথমে ভর্তি হন কলকাতার মডেল স্কুলে। এই স্কুল থেকে পরবর্তীতে শিশু বিদ্যাপীঠে। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এই বিদ্যাপীঠেই পড়েন। পরবর্তীতে আবার মডেল স্কুলে ফিরে যান। কলকাতায় মডেল স্কুলের পর চট্টগ্রামে চলে আসেন। এখানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। এই ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাকে “ডাবল প্রমোশন” দিয়ে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে নেয়া হয়। নবম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি এই স্কুলে পড়াশোনা করেন। এখানে পড়ার সময়ই গণিতের প্রতি তার অন্যরকম ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। অনেক অতিরিক্ত জ্যামিতি সমাধান করতে থাকেন। নবম শ্রেণিতে উঠার পর পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে গিয়ে ভর্তি হন লরেন্স কলেজে। এই কলেজ থেকেই তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ ও হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পাশ করেন। এ সময় নিজে নিজে অনেক অঙ্ক কষতেন। বিভিন্ন বই থেকে সমস্যা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতেন যা পরবর্তীতে তার অনেক কাজে আসে। উল্লেখ্য, হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজে তিনি একাই কেবল গণিত পড়েছিলেন। এটা বেশ উচ্চ পর্যায়ের গণিত হওয়ায় সবাই নিতে চাইতো না। এ সময়ই গণিতের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। লরেন্স কলেজের পাঠ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে যান।[৬] এখান থেকে বিএসসি অনার্স করেন।

এই কলেজের একজন শিক্ষককে তিনি নিজের প্রিয় শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই শিক্ষকের নাম “ফাদার গোরে”। গণিতের জটিল বিষয়গুলো খুব সহজে বুঝিয়ে দিতেন বলেই জে এন ইসলাম তার ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। গোরে তার কাছে গণিতের বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইতেন, ইসলাম আগ্রহভরে তা শেয়ার করতেন। গোরের সাথে ইসলামের এই সম্পর্কের কারণ বলতে গিয়ে ইসলাম বলেন,

গণিতকে এমনিতেই অনেকে ভয় পেত। কিন্তু এটির প্রতিই ছিল আমার অসীম আগ্রহ, ঝোঁক। এ কারণেই বোধহয় তিনি আমাকে পছন্দ করতেন।

বিএসসি শেষে ১৯৫৭ সালে ইসলাম কেমব্রিজে পড়তে যান। কেমব্রিজের প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এখান থেকেই ১৯৬০-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[৭] ১৯৬৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসসিডি (ডক্টর অফ সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top