ঝিনাইদহের দারুস শেফা হাসপাতালে হিন্দু ছেলে কর্তৃক মুসলমান মেয়ে ধর্ষিত! দেড় মাসের অন্তঃসত্ত্বা! কোর্টে মামলা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দারুস শেফা হাসপাতালে লিংকন বিশ্বাস (২২) নামে এক হিন্দু ছেলে কর্তৃক মুসলমান একটি মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে ঐ ভুক্তভোগী মেয়েটি ঝিনাইদহ বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দাখিল করলে ডব্লিউ/এ- এফআইআর হিসেবে গণ্য করেছে আদালত।
মামলা ও ভুক্তভোগী সুত্রে জানা গেছে, জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দারুস সেফা হাসপাতালে তারা দু’জন চাকরি করার সুত্রে পরিচয় ঘটে। পরিচয়ের সূত্র ধরে এক পর্যায় লিংকন মুসলমান হয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করবে এই ওয়াদা করলে, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবে দুই বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলতে থাকে। ভুক্তভোগী মেয়েটি জানান, এরই মধ্যে গত ২৩ এপ্রিল শনিবার রাত্রে ডিউটি করা কালীন সে হাসপাতালের অপারেশন রুমে একা অবস্থান করছিল। এসময় রাত আনুমানিক ১১টার দিকে হঠাৎ লিংকন অপারেশন রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর তাকে জড়িয়ে ধরে শরিরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেওয়া সহ মুখে চুমু খেতে থাকে। একপর্যায় লিংকন তার সাথে দৈহিক মেলামেশা করতে চাইলে মেয়েটি বাঁধা দিয়ে বলে বিয়ের আগে কোন দৈহিক সম্পর্ক হবে না। কিন্তু লিংকন তার বাঁধা উপেক্ষা করে জোর পূর্বক দৈহিক মেলামেশায় মেয়েটি ধর্ষিত হয়। এরপর মেয়েটি কান্নাকাটি করতে থাকলে পরেরদিন ২৪ এপ্রিল একটি নন জুডিসিয়াল ১০০ টাকার স্টাম্পে লিংকন তাকে বিয়ে করার অঙ্গীকার করে। এর মাস দুয়েক পর ২১জুন ঠিক একই জায়গায় নিয়ে লিংকন মেয়েটিকে বলে আজ আমার সাথে সেক্স করলে তোমাকে বিয়ে করবো! ঐ দিনও মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে দৈহিক মেলামেশা করে লিংকন। এরপর তাকে বিয়ে করবে বলে দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকে। এরমধ্যে মেয়েটি অনুভব করে সে সন্তানসম্ভবা! যার ডাক্তারি পরিক্ষা মোতাবেক বর্তমান বাচ্চার বয়স হয়েছে প্রায় দেড় মাস। মেয়েটি লিংকনকে এ বিষয়ে জানানোর পরেও বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় গত ২২ জুলাই শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বামনাইল গ্রামে বিয়ের দাবি নিয়ে লিংকনের বাড়িতে ওঠে। সেখানেও বিয়ে করবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয় লিংকন। লিংকন বামনাইল গ্রামের অমৃত বিশ্বাসের ছেলে।
এদিকে লিংকনের বাড়িতে মেয়েটি আসার সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সুষেন মেম্বার ও অনিমেষ মিলে দারুস শেফা হাসপাতালের পাঠানো একটি গাড়ি নিয়ে মেয়েটিকে ঐ বাড়ি থেকে জোর পূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। গাড়ির মধ্য থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিতে সুষেন মেম্বার মেয়েটির সাথে ধস্তাধস্তি করে বলেও কথিত রয়েছে। জানা গেছে, সুষেন ফুরসুন্ধি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের রানিং মেম্বার। অনিমেষ ও একই এলাকার বাসিন্দা। এর আগেও সুষেন মেম্বারের বিরুদ্ধে শালিস বানিজ্যের একাধিক অভিযোগ রয়েছে সুত্রটি জানায়। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সুষেন মেম্বার ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে অবৈধ অস্ত্র সহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় এবং ঐ মামলায় দীর্ঘ ১৪ বছর কারাভোগ করে সুষেন। অনিমেষও অস্ত্র মামলার আসামি। তিনিও অস্ত্র মামলায় দেড় বছর কারাভোগ করার পর জামিনে মুক্তি পায়। লিংকনের এই ঘটনা মিমাংসা করে দেবে বলে লিংকনের বাবা অমৃত বিশ্বাসের কাছ থেকে সুষেন মেম্বার ও অনিমেষ মিলে দুই লাখ টাকা নিয়েছে বলেও বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। অনিমেষ কালিগঞ্জের আনার এমপির সাথে থাকায় সে ব্যপক ক্ষমতাশীন বলেই জানেন এলাকাবাসী। যে কারণে লিংকন এতো বড় অপরাধ সংঘটিত করার পরেও নাকে তেল নিয়ে ঘুমাচ্ছেন বাবা অমৃত। একপর্যায় ক্ষুব্ধ হয়ে এমনটিই বলেন ভুক্তভোগী মেয়েটি। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সুষেন মেম্বার বলেন, দারুস শেফা হাসপাতালের মালিক ফিরোজ মেয়েটিকে তুলে নিতে একটি গাড়ি পাঠিয়েছিল আমরা মেয়েটিকে তুলে নিয়ে তার অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়েছি। দারুস শেফা হাসপাতালের মালিক ফিরোজ জানান, ঘটনার বিষয়ে পরে জানতে পেরে তাদের দুজনকেই চাকরি হতে অব্যহতি দিয়েছি। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লিংকনের ছোট ভাই ইমন ও তার মা বলেন, এর আগে এ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। মেয়েটি বিয়ের দাবি নিয়ে যখন বাড়িতে ওঠে তখন ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তারা বলেন, এ ঘটনা জানার পর আমরা ছেলেকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। ফুরসুন্ধী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহিদ শিকদার অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মামলার আইনজীবী খলিল মিয়া জানান, এবিষয়ে ঝিনাইদহ বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দাখিল করা হয়েছে, মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করেছে আদালত।