
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ-
করোনার টিকা প্রদানের সময় ঝিনাইদহের স্থায়ী কেন্দ্র সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে শৃঙ্খলা ও অনলাইন সাপোর্ট দেয় বাংলাদেশ স্কাউটস ঝিনাইদহ জেলা রোভারের সদস্যরা ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব ইউনিটের সদস্যবৃন্দ। ২০২১ সালের ৮ ফেব্রয়ারি করোনার টিকা প্রদান শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা এই সেবা দিয়েছে ২০২৩ সালের জুনের শেষ পর্যন্ত। প্রথম অবস্থায় তাদেরকে মাথাপিছু ৩৫০ টাকা করে সম্মানি দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২২ সালের জুন মাসের পর থেকে তাদেরকে আর কোন সম্মানি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে ভলান্টিয়াররা। স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে তাদের সম্মানির পৌণে ১৩ লাখ টাকা পাওয়া বর্তমানে অনিশ্চিৎ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে গত জুলাইয়ের ২২ তারিখে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন স্কাউট রোবারের টিম লিডার মামুনুর রশিদ। অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা মিলছে না বলে জানান মামুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ৭১৪টি ৩৫০ টাকা করে এবং ১৪৯৪টি ৪০০ টাকা হারে মোট ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা সম্মানি পাওনা রয়েছে। আমাদের প্রতিদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। আমাদের একসাথে ৩/৪ মাসের বিল দেওয়া হতো। ২০২২ সালের জুনের পর বিল দিতে দেরি হলে আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে বিল চাইলে বলেন, অস্থায়ী ক্যাম্পের ভলান্টিয়ারদের বিল হবে তবে স্থায়ী কেন্দ্রের ভলান্টিয়ারদের বিল হবে কিনা বলতে পারছি না। তবে তিনি আমাদের কাজ করতে নিষেধ করেননি। আমরা কাজ চালিয়ে গেছি। এর মধ্যে সময় মতো আমরা কেন্দ্রে হাজির না হলে কর্মকর্তাদের কাছে বকাও খেয়েছি। আমাদেরকে বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের সম্মানি দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল থেকে নাস্তাও দেওয়া হয়নি। আমাদের খরচেই আমরা নাস্তা করেছি। ২০২৩ সালের ফেব্রয়ারি মাসে তিনি বলেন বিল দেবে না। ততো দিনে আমাদের অনেক টাকা পাওনা হয়ে গেছে। তবে তিনি আমাদের বিল পাওয়ার ব্যাপারে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে চেষ্টা করে দেখবেন বলে জানান। ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে আমরা কাজ বন্ধ করে দিই। পরে বিল না পেলে আমরা জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিই।
এদিকে জানা গেছে, করোনা টিকাদানের আরেক স্থায়ী কেন্দ্র সদর হাসপাতালে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করে ৪ লাখের বেশি বিল পাওনা রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়ারদের। ২০২২ সালের জুন মাসের পর থেকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালনের সম্মানির প্রায় পৌণে ১৩ লাখ টাকা পাওয়া অনিশ্চিৎ।
ঝিনাইদহ রেড ক্রিসেন্টের যুব প্রধান মৃদুল জানান, আমাদেরকে বলা হয়নি যে, বিল দেওয়া হবে না। যে কারণে সদর হাসপাতালে যতোদিন টিকা কার্যক্রম চালু ছিল ততোদিন আমরা কাজ করেছি।
এবিষয়ে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিথিলা ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ভলান্টিয়ারদের সম্মানি দেওয়া হয়েছে। তার পর থেকে তাদের আর কোন বিল হয়নি। ভলান্টিয়ারদের সেই সময়েই জানানো হয় তাদের আর বিল হবে না। আমি কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। পেলে সিভিল সার্জন মহদয়ের সাথে কথা বলে দেখবো।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বিল হয়েছে সেই গুলো পরিশোধ করা হয়েছে। তার পর থেকে বিল হয়নি। তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছে এখন বিল নিয়ে অভিযোগ কেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, ২০২২ সালের পর থেকে ভলান্টিয়ারদের জন্য মন্ত্রণালয় আর বিল দেয়নি। সেই সময় তাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। সরকার না দিলে আমরা কি করবো।
এদিকে, বিল না পেলে ভলান্টিয়াররা স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েছে। স্কাউটস রোভার প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর যে অভিযোগ দিয়েছি সেটাতে তিনি কি ব্যবস্থা নেয় দেখার অপেক্ষায় আছি। প্রয়োজনে আমরা কর্মসূচি দেবো।