ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
থানায় দায়েরকরা অভিযোগ তুলে না নেওয়াই নারীকে ফাঁসাতে গিয়ে ঝিনাইদহ সদরের রামনগর গ্রামে দিনমজুর আসলাম হোসেন (৪৩) কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সোহেল রানা নামের এক জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৬। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জ সদর থানার চান্দিরচর এলাকা থেকে র্যাব-৬ ও র্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দুধসর এলাকায় বসবাস করতো। র্যাব-৬ এক ই-মেইল বার্তায় সাংবাদিকদের জানায়, আসামিকে গ্রেফতারের পর ঝিনাইদহ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এবিষয়ে বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান জানান, গত ১৮ নভেম্বর সকালে ঝিনাইদহ সদর থানার মহারাজপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রামনগর গ্রামের জনৈক মোস্তফার কলাবাগান থেকে দিন মজুর আসলাম হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ভিকটিমের মাথা, হাতের তালু ও কানের পাশে মারাত্মক জখমের চিহ্ন ছিল। ঘটনাস্থল হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত কিছু জামাকাপড়, একটি শাবল ও একটি কাচি উদ্ধার করা হয়। সে পাবনা জেলার চাটমোহর থানার বহরপুর গ্রামের মৃত ফরিদুল ইসলামের ছেলে। মরদেহ উদ্ধারের সময় আসলাম হোসেনের প্যান্টের পকেট থেকে নাজমা বেগম নামের শৈলকুপা উপজেলার দুধসর গ্রামের এক নারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি পায় পুলিশ। পরে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা এবং সেই পরিচয়পত্রের সুত্র ধরে নাজমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, একই এলাকায় বসবাসের সুত্র ধরে তার সাথে সোহেল রানার ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু গেল কিছুদিন যাবৎ তাদের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। পরে নাজমা শৈলকুপা থানায় সোহেল রানার নামে নিজের রান্না ঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগ তুলে নিতে সোহেল বার বারই তাকে হুমকি দিতে থাকে এবং নিজে আত্মগোপনে থাকে।
পুলিশ সুপার আরো জানায়, সোহেলের কোন ছবি না থাকায় নাজমার বর্ণনা অনুসারে স্কেচ তৈরি করে বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়। পরে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে র্যাবের সহায়তায় মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার চান্দির চর এলাকা থেকে মূল হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারী আসামী মোঃ সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোহেল রানা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে জানায়, গত ১৭ নভেম্বর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মুরগিহাট এলাকায় সে কাজের জন্য যায়। সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয় পাবনা থেকে কাজের জন্য আসা আসলাম হোসেনের। তখন সে কাজ দেওয়ার কথা বলে আসলামকে জেলা সদরের রামনগর গ্রামের কলাক্ষেতে নিয়ে যায় এবং শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে নাজমা বেগমকে ফাঁসাতে জাতীয় পরিচয়পত্র আসলামের প্যান্টের পকেটে রেখে দেয়।গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং জানায় যে, উদ্ধারকৃত শাবল দিয়ে আঘাত করে দিনমজুর আসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সোহেল রানা।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ইমরান জাকারিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ ও অপারেশন) মোহাম্মদ মহিদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আবিদুর রহমান, সদর থানার ওসি শাহীন উদ্দিন সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।