ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহে ভুয়া কাগজ বানিয়ে ভুমি অধিগ্রহণের ৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবারটি জানান, অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকানা হওয়ার তাদের কাছে যথেস্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিচার পাচ্ছেন না তারা।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে গ্যাস সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ-২-এর আওতায় খুলনাঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রথমে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পয়েন্ট থেকে সিরাজগঞ্জ, নাটোরের বনপাড়া ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৪১ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় দফায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে ঝিনাইদহ যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। জেলা প্রশাসকের তথ্যমতে ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে ২৬ ফুট করে ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ১১৬ দশমিক ৮৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এতে জমি মালিকদের ন্যায্য মুল্য থেকেও ৫০% অতিরিক্ত দিয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারের বরাদ্দের টাকা গুনতে হয়েছে, ৪১ কোটি ৪৫ লাখ ৮২ হাজার।
এসময় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৫৯ নং পবহাটি মৌজার এসএ ৫৩৭ ও ১৫২ নং খতিয়ানের ৮৯০ নং দাগ থেকে ১৩ শতক ২০ পয়েন্ট জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এই ১৩ শতক ২০ পয়েন্ট জমির ক্ষতিপূরণের টাকা জালিয়াতি করে পূর্বের বিক্রিত মালিক পবহাটির ঝড়ু মণ্ডল গংরা উত্তোলন করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জমির বর্তমান মালিক একই গ্রামের ভুক্তভোগী হাতেম আলী গংরা। বিষয়টি ঝিনাইদহ বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানান এই পরিবারটি।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, ১৫৯ নং পবহাটি মৌজার সাবেক ৮৯০ নং দাগের ৫৩৭ নং খতিয়ানটি ঝড়ু মণ্ডলের নামে রেকর্ড থাকে। ঝড়ু মণ্ডল মারা গেলে ওয়ারেশ সুত্রে তার ৪ পুত্র জলিল, গোলাম সরোয়ার, মহিউদ্দিন ও আব্দুল কুদ্দুস ৮৯০ দাগের ৬৯ শতক জমি বজলুর রহমানের কাছে বিক্রি করে। বজলুর রহমান মারা গেলে ওয়ারেশ সুত্রে তার ৪ পুত্র ও ১ কন্যা তাদের অংশের জমি থেকে ১৯৮৬ সালের ৩০ জুন ৮৮০৪ নং কবলা দলিলে ৮৯০ নং দাগ থেকে ৩০ শতক এবং ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসের ২ তারিখে একই দাগ থেকে ৮৮৮২ নং কবলা দলিলে ৩০ শতক, মোট ৬০ শতক জমি বিক্রি করে বর্তমান মালিক আবুল কাশেম, শামসুল মণ্ডল, আফজাল হোসেন, মোঃ তৈয়ব আলী, মোঃ আয়ুব আলী, মোঃ রজব আলী, মোঃ ফজলুর রহমানের কাছে। এর মধ্যে কাশেম আলী মারা যাওয়ায় তার দুই পুত্র আলমগীর হোসেন, আযম আলী ও ১ স্ত্রী মোছাঃ ময়না খাতুন ওয়ারেশ হয়। এরপর থেকে দ্বাদশ বছরের অধিক সময় ধরে তারা জমিটি ভোগ দখল করে আসছেন।
এদিকে আরএস রেকর্ড আমলে তাদের স্বত্ব দখলীয় জমি রেকর্ড করানোর জন্য তৎকালীন সময় জমাজমির বিষয়ে অভিজ্ঞ থাকায় আব্দুল জলিল মন্ডলের উপর দায়িত্ব দেন তারা। সেসময় ভুক্তভোগীরা জমাজমি সম্পর্কে না বোঝার সুযোগ নিয়ে আব্দুল জলিল মন্ডল জরিপ কর্মচারিদের সাথে যোগসাজশ করে আর এস ডিপি ৫৮৯,১৯৬/১,১১৪৩,২২১ নং খতিয়ানে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে রেকর্ড করে নেয়।
পরে ভুক্তভোগীরা বিষয়টি জানতে পেরে, আর এস ১৫২৯ নং ও সাবেক ৮৯০ দাগের জমি আর এস ৩৬৭৬ দাগ সুচিত করে ভুক্তভোগীদের নামে রেকর্ড করে নেন। বর্তমানে মামলার বিবাদীদের নামে কোন আর এস রেকর্ড না থাকা স্বত্বেও আব্দুল জলিল ডিপি ২২১, মহিউদ্দিন ডিপি ১১৪৩, আব্দুল কুদ্দুস ডিপি ১৯৬/১, গোলাম ছরোয়ার ডিপি ৫৮৯ নং জাল খতিয়ান তৈরি করেন,। পরে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহের অফিসে দাখিল করে এবং এল এ অফিসে এই ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ৮৯০ দাগের ১৩ শতক ২০ পয়েন্ট অধিগ্রহণকৃত জমির ৫ লক্ষ ৩১ হাজার ৩ শত ৩৩ টাকা ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি ঝড়ু মণ্ডল গঙেরা উত্তোলন করে নেয়।
এবিষয়ে মামলার বিবাদী পক্ষের মোঃ দাউদ এই জমির মালিক তারা দাবি করলেও কোন তথ্য প্রমাণ দেখাননি তিনি।
মামলার বিচার না পেয়ে বাদী আলমগীর হোসেন কেঁদে কেঁদে জানান, অধিগ্রহণকৃত জমির দলিলপত্র ও দখল থাকা সত্ত্বেও কোন অজ্ঞাত কারণে আমাদের পক্ষে রায় দেওয়া হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি আরো জানান, এ মামলার জন্য আমরা নাকি অন্য কোথাও বিচার চাইতে পারবো না, আদালত থেকে তাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মোঃ শফিউল আলম জানান, পুরাতন কাগজপত্র দিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে বিবাদীগণ অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। বাদি পক্ষের অধিগ্রহণকৃত জমির স্বত্ব থাকার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে । যে কারণে বিজ্ঞ আদালতে টাকা ফেরৎ চেয়ে আপিল মামলা করা হয়েছে। মামলাটি চলমান রয়েছে।