বিশেষ প্রতিবেদক ঝিনাইদহ-
ঝিনাইদহে মর্মান্তিক মোটর সাইকেল দুর্ঘনায় তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। শুক্রবার রাতে একই মোটর সাইকেলে চলার পথে রাস্তার পাশে পার্কিং করে রাখা পল্লি বিদ্যুতের পিলার বোঝাই একটি ট্রাকের সাথে সজোরে ধাক্কা খেয়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
এরা হচ্ছে, ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের ভিপি সাইদুজ্জামান মুরাদ বিশ্বাস (২৫), তিনি সদর উপজেলার কুশাবাড়িয়া গ্রামের বাদশা মোল্লার ছেলে। তৌহিদুল ইসলাম (২৫), তিনি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বনেশ্বরপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে এবং একই কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়াও যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পালদিয়া গ্রামের রাখাল চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সমরেশ চন্দ্র বিশ্বাস (২৩) নামে আরেকজন শিক্ষার্থী এঘটনায় নিহত হয়। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ঝিনাইদহ চুয়াডাঙ্গা সড়কের আঠারো মাইল নামক স্থানে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এদিকে প্রতিপক্ষের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে ঐ তিন শিক্ষার্থী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটর সাইকেল ট্রাকের সাথে মেরে নিহত হওয়া এবং ভেটেরিনারি কলেজের আরেক শিক্ষার্থী জিএস সজিব হাসানকে কুপিয়ে জখম করেছে বলেও এ ঘটনার সাথে কথিত রয়েছে। সজিব হাসানও একই মোটর সাইকেলের যাত্রী ছিলেন বলে জানা যায়।
এ ঘটনার বর্ণনায় একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ঝিনাইদহ শহর থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাগর হোসেন সোহাগের সঙ্গে দেখা করে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন তারা। এসময় সদর উপজেলার জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্কের কাছে পৌছালে ভেটেরিনারি কলেজের জিএস সজিব হাসানকে চলন্ত মটরসাইকেলে বসা অবস্থায় ওৎ পেতে থাকা কে বা কাহারা অতর্কিত কুপিয়ে জখম করে। এসময় কোপ খেয়ে সজিব মটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং পুলিশের সহায়তা চাইলে ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশ তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌছে দেয়। এরপর ভেটেরিনারি কলেজের ভিপি মুরাদ বিশ্বাসসহ ছাত্রলীগের তিন কর্মী একই মটরসাইকেলে যাওয়ার সময় চলন্ত অবস্থায় তাদেরও আক্রমন করা হয়। তারা দ্রুত মটরসাইকেল চালিয়ে ১৮ মাইল নামক স্থানের পল্লী বিদ্যুতের ডিপোর সামনে পৌছালে অন্ধকারে দাড়িয়ে থাকা খুটি বোঝায় ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মুরাদ বিশ্বাস, তৌহিদুর রহমান ও সমরেশ চন্দ্র বিশ্বাস। ট্রাকটির রেজিঃ নাম্বার হলো (চট্রমেট্রো-চ-৮১৩৪৫৪)।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের উপ পরিচালক মোঃ শামীমুল ইসলাম জানান, নিহতদের মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। মটরসাইকেল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
মন্তব্য করে একটি সুত্র জানায়, ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ডিভিএম ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাসের পর মাস আন্দোলন করছেন। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে ওই কলেজের শিক্ষার্থী ও বর্তমান ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতার সাথে দ্বন্দ চলছিল। এই দ্বন্দের জের ধরেই তাদের উপর হামলা চালানো হতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে হতাহতরা সবাই তার গ্রুপের লোক বলে স্বীকার করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান। তিনি জানান, যে গ্রুপই হামলা করুক এটা অন্যায় ও অমানবিক হয়েছে। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের ভিপি ও জিএস তার সঙ্গেই রাজনীতি করেন। তবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কারা হামলা চালিয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, খবর পেয়ে সজিব নামে একজনকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছে বলে আবার খবর পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ তৌফিক হাসান জানান, নিহত তিনজনের মাথায় গুরুতর জখম রয়েছে। তবে হামলায় আহত সজিবের অবস্থা ভালো আছে। তার বাম হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে।