ঝিনাইদহে সেই ধর্ষণ ঘটনায় পেটৈর বাচ্চা কে হত্যার অভিযোগে দ্বিতীয় দফায় মামলা! আসামির পেছনের শক্তি কারা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরতলীর দারুস সেবা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে হিন্দু ছেলে কর্তৃক একজন মুসলমান মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হলেও আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে আসামীরা। ভুক্তভোগীর ভাষ্য মতে লিংকন নামের ধর্ষক ঐ হিন্দু ছেলেটির চাচা অনিমেষ আসামীর বাবার কাছ থেকে টাকা খেয়ে মামলা থেকে মুক্তি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষিতা ঐ মেয়েটিকে পাশবিক নির্যাতন সহ দিনের পর দিন মামলা তুলে নিতে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি লিংকনের দ্বারা ধর্ষনের স্বীকার হয়ে মেয়েটি যে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল, প্রমান না রাখতে তাও ঐ অনিমেষ সহ চার পাঁচ জন মিলে জোর পূর্বক ওষুধ খাইয়ে নষ্ট করে দিয়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী ঐ নারী। অনিমেষ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফুরসুন্ধি ইউনিয়নের বামনাইল গ্রামের অতুল বিশ্বাসের ছেলে এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের পার্সনাল কেয়ারটেকার বলে জানা গেছে। ধর্ষক লিংকন একই গ্রামের অমৃত বিশ্বাসের ছেলে।

উল্লেখ্য: কালিগঞ্জের দারুস সেবা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার থেকে সহকর্মী লিংকনের হিংশ্রতার মুখে ধর্ষিত হয় মুসলিম ঐ মেয়েটি। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মেয়েটি বাদি হয়ে ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে FIR হিসাবে গ্রহণ করেন আদালত। পরে পিবিআই ঝিনাইদহকে তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ধর্ষকের পক্ষ থেকে ঐ নারীর পেটের বাচ্চা জোর পূর্বক নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগে একই আদালতে অনিমেষ কে ১নং আসামী এবং জড়িত থাকার অভিযোগে আরোও ৪জনকে আসামী করে আরেকটি মামলা করেন ঐ নারী।
মামলা ও ভুক্তভোগীর কাছে জানা গেছে, প্রথম মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে বিষয়টি মিমাংসার জন্য বামনাইল গ্রামের অতুল বিশ্বাসের ছেলে সুজন বিশ্বাস মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করে গত ২৭ জুলাই মেয়েটিকে অমৃত বিশ্বাসের বাড়িতে যেতে বলে। সুজনের কথামত মেয়েটি ঐ বাড়িতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সাংবাদিকরা সহ স্থানীয়রা সেখানে জড় হয়। যেকারনে সুজন মেয়েটিকে বলে, বিভিন্ন লোক জানাজানি হয়ে গেছে এখন আর মিমাংসা হবে না। পরে মেয়েটিকে ঐ বাড়ি থেকে পুলিশ নিয়ে এসে বের করে দেয় তারা। নারিকেল বাড়িয়া ক্যাম্পের আইসি জানান, খবর পেয়ে দুইজন পুলিশ সদস্য সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর মেয়েটি নিজে থেকেই ঐ বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মেয়েটি জানান, পুলিশের উচিত ছিলো আমাকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া নইলে আমার অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু তারা তা না করে আমাকে ঐ বাড়ি থেকে বের করে রাস্তায় উঠিয়ে দিলো।

মেয়েটি জানায় আমি তখন দিশেহারা হয়ে গ্রামের বাড়ি জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার দিকে রওনা হই। মেয়েটি আরও বলেন, আমি যখন গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হই সেসময় গোপনে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে আমার পিছু নেয় বামনাইল গ্রামের অরবিন্দুর ছেলে অনিমেষ, অতুল বিশ্বাসের ছেলে সুজন ও অমৃত বিশ্বাস, অমৃত বিশ্বাসের ছেলে ইমরান ও ঘোষ্ট বিশ্বাসের ছেলে শুসেণ মেম্বার। ঝিনাইদহ শহর পেরিয়ে কোটচাঁদপুর যেতে পাগলা কানাই ইউনিয়ন পরিষদ চৌরাস্তায় পৌঁছালে, সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি সামনে এসে তার চলার পথে গতিরোধ করে।

এসময় মাই্ক্রোবাস থেকে সুজন বেরিয়ে এসে ৩ লক্ষ টাকায় মিমাংসা করে নেওয়ার জন্য আমাকে প্রস্তাব দেয়। আমি তাতে রাজি না হলে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আমার নাক মুখ পেঁচিয়ে একটি রুমাল ধরে। এরপর মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে তারা কোটচাঁদপুরের দিকে রওনা হয়। পথিমধ্যে একটি সেভেন আপের বোতলে ঐষধ গুলিয়ে আমাকে জোর পূর্বক খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে আমি ঔষধ গিলে ফেলতে বাধ্য হই। পরে কোটচাঁদপুরের ফুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে আমাকে ধাক্কা মেরে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এসময় আমার পেটের মধ্যে ব্যথা ও জরায়ু দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। পরে স্থানীয়দের চোখে পড়লে তাকে দ্রুত মহেশপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মেয়েটির পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানায়। মেয়েটি সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক এ ঘটনার বিচার পেতে আইনের সহায়তা কামনা করেছেন।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে ফুরসুন্ধি ইউনিয়নের সদস্য শূসেন মেম্বারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বরাবরই এঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন হিন্দু মুসলিমের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি না হয় সে কারণে মিমাংসার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন ভাবেই যখন মিমাংসা করা সম্ভব হলোনা তখন মেয়েটিকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলায় যে অভিযোগটি করা হয়েছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা। এছাড়াও ঘটনার বিষয় অস্বীকার করে অনিমেষ জানান, আমার উপর আনিত এ অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বলেন, আমি ঐ দিন কালিগঞ্জ ৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সাথে ঢাকাতে ছিলাম।

বাদি পক্ষের মামলার আইনজীবী খলিল মিয়া জানান, এ ঘটনায় ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দুইটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলার তদন্ত ভারই পিবিআই ঝিনাইদহকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। তদন্ত রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top