বিশেষ প্রতিবেদক-
ঝিনাইদহে সেনাসদস্য সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামী মতিয়ার রহমান ওরফে ফনেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। মতিয়ার রহমান ফনে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের ইয়াকুব্বার মন্ডলের ছেলে। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা গ্রেফতারের খবরটি নিশ্চত করেন।
সুত্রে জানা গেছে, ফাঁসির আদেশের পর থেকেই মতিয়ার রহমান ফনে পরিচয় গোপন করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা পশ্চিমপাড়ার হাফিজ উদ্দীন হাবুর বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম সাইফ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল পদে টাঈাইল জেলার ঘাটাইল আর্মি মেডিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট তিনি ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসেন। পরদিন ১৮ আগষ্ট রাতে শ্বশুর সামসুল মোল্লা তাদের বাড়িতে আসছিলেন। শশুর কে এগিয়ে আনতে বদরগঞ্জ বাজারে যান ঐ আর্মি সদস্য। এসময় তার সঙ্গে যান ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ইসলাম নৌ বাহিনীতে চাকরি করেন।
ফেরার পথে হাওনঘাটা নামক স্থানে ডাকাতদলের কবলে পড়েন তারা। ডাকাতদল রাস্তায় গাছ ফেলে তাদের গতিরোধ করে। এ সময় সেনা সদস্য সাইফ মোটরসাইকেল থেকে নেমে ডাকাতদলকে প্রতিরোধ করার চেষ্টাকালীন দুষ্কৃতকারীদের একজন তাকে দা দিয়ে কোপ দিলে গলায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সাইফকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পরেরদিন সাইফের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে প্রথমে বংকিরা গ্রামের ফারুক হোসেন ওরফে ফারুকের ছেলে আকিমুলকে আটক করে। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে আকিমুল হত্যা মিশনে কারা অংশ নেয় তাদের নাম প্রকাশ করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আটজনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করলেও প্রথম থেকেই পলাতক ছিলেন মতিয়ার রহমান ফনে।
ঝিনাইদহ সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো মহসীন হোসেন ২০১৯ সালের ৩০ জুন আদালতে আটজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর এই মামলার ৮ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষনা করেন খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম হাওলাদার।
আসামিরা হলেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের আসামি আকিমুল ইসলাম ও মোঃ ইয়াকুব্বর মন্ডলের ছেলে মোঃ মতিয়ার রহমান ওরফে ফনে, একই উপজেলার বোড়াই গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, আসাননগর গ্রামের নবী মোল্লার ছেলে মোঃ আব্বাস আলী, একই গ্রামের মৃত রমজান মোল্লার ছেলে মোঃ আবুল কাশেম, মৃত সাহেব আলীর ছেলে মোঃ ফারুক হোসেন, এনায়েতপুর গ্রামের দাউদ মন্ডলের ছেলে মোঃ মুক্তার হোসেন ওরফে মুক্তার এবং চুয়াডাঙ্গার ভুলতিয়া গ্রামের মৃত সবেদ আলী মোল্লার ছেলে ডালিম মোল্লা।