ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের
বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশিদ। বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, আমি খুবই মর্মাহত ও লজ্জিত এই বলে যে, আমরা সকলেই জেলার সম্মানিত সদস্য ও নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং একই পরিবারের মতো। তাদের কে অপমান করা মানে আমার নিজেকে অপমান করা।
আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে আপনাদেরকে জানাচ্ছি যে, গত ২০ সেপ্টেম্বর আমার বিরুদ্ধে আমার পরিষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দরা যে যে বিষয়ে অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তা আমি আমার অবস্থান সম্পর্কে আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপন করছি।
ধোপাঘাটা ও হামদহতে দোকান ও মাটি ভরাটের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে সরকারের সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে অবৈধ দখল মুক্ত করার লক্ষ্যে সেখানে দোকান ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধুমাত্র গর্ত ভরাটের লক্ষ্যে অগ্রীম অর্থ ব্যয় করা হলেও নির্মাণ শেষে সেলামীর অর্থ দ্বারা অগ্রীম পরিশোধসহ নির্মাণ কাজের সকল ব্যয়ভার বহন করা হবে।
এডিপি প্রকল্প নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সেলাই মেশিন ক্রয়, বাইসাইকেল ক্রয়, ফুটবল ক্রয়, ত্রান সামগ্রী এবং কম্বল ক্রয় ও বিতরণ সংক্রান্ত গৃহীত প্রকল্প সমূহ বিধি মোতাবেক ত্রান সামগ্রী ও কম্বল যথা নিয়মে জেলার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাম পর্যায়ে গরীব মানুষের মাঝে একই ভাবে ফুটবল ক্রয় করে জেলার পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন সদস্যগণের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। সেলাই মেশিন ও বাইসাইকেল ক্রয় করে সংরক্ষন করা আছে। আমি পবিত্র হজ্জ পালন করতে যাওয়া এবং শোকের মাস আগষ্টের কারনে অনুষ্ঠান করে বিতরণ করা হয়নি। খুবই দ্রুতই বিতরণ করা হবে। অতএব তাদের এ অভিযোগও ভিত্তিহীন। ত্রান সামগ্রী, কম্বল ও ফুটবল সম্মানিত সদস্যগণের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
প্রকল্প সমূহ বিধি মোতাবেক পরিষদের সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেকারণে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রশ্নই ওঠেনা।
সুতরাং আমাকে লোক সমাজের কাছে হেও করার জন্য এটা বলা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অত্র কার্যালয় থেকে নিতান্তই দরিদ্র এবং অসহায় মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা নগদ/চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ বেয়ারার চেক দেয়া হয়। তবে আমাদের মাধ্যমে পূর্বে কিছু মানুষকে সেই পরিমানের চেয়ে বেশি টাকার চেক একাউন্ট পে দেয়া হলেও তারা গরীব এবং একাউন্ট না থাকায় মানবিক দিক বিবেচনা করে একাউন্ট পে সংশোধন করা হয়। বর্তমানে ১/২ মাস যাবৎ এ ধরনের কোন কার্যক্রম গ্রহন করা হয়নি। সুতরাং গরীবের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমি অত্যন্ত লজ্জিত যে, আমার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান সৃজনী ও তাজ ফিলিং স্টেশন কে আমার বর্তমান পদের সাথে জড়িয়ে তারা যে অভিযোগ করেছেন, অনেক আগেই প্রতিষ্ঠান সমূহের সার্বিক দায়িত্ব থেকে আমি অব্যাহতি গ্রহণ করেছি।
এছাড়াও পেট্রোল/অকটেন এর বাজার দর নির্ধারিত। সুতরাং বেশিমূল্যে ক্রয় করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অফিসের পিছনে গাছের লগ পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার জানামতে কোন কাঠ এখান থেকে বিক্রয় করা হয় নাই। এছাড়া ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের গাছ বিক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ সম্পর্কে তারা যে অভিযোগ এনেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেননা এগুলো বিধি মোতাবেক টেন্ডার প্রদান করে বিক্রয় পূর্বক সংশ্লিষ্ট হিসাবে অর্থ জমা প্রদান করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, দাপ্তরিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে জেনারেটর ক্রয় করা হয়। জেনারেটর এর বাজার মূল্য নির্ধারিত। এটা ক্রয়ের যথাযথ ভাউচার সংরক্ষন করা হয়েছে। সুতরাং অতিরিক্ত মূল্যে জেনারেটর ক্রয় করে অর্থ আত্মসাতের কোন সুযোগ নাই।
বিধি মোতাবেক জেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপস্থিত সদস্যগনের স্বাক্ষর গ্রহণের নিমিত্তে সংরক্ষিত রেজিষ্ট্রারে প্রতিটি সভার স্বাক্ষর গ্রহন করা হয়। অতঃপর তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা ক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ রেজুলেশনে অন্তর্ভূক্ত করা হয় । তাই একই প্রকল্প বারবার গ্রহণ করে অর্থ আত্মসাতের কোন সুযোগ নাই। এছাড়া সমগ্র জেলার সুপেয় পানি সংরক্ষনের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের পুকুর ও খাল ইজারা প্রদানের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।
তবে সুপেয় পানি সরবরাহে পুকুর ও খাল সমূহ ব্যবহার না হবার কারণে, অবৈধ দখলমুক্ত রাখার এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলকার ব্যবহার নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের উদ্ভবের নিরসনে পরিষদের সভার সিদ্ধান্তে কয়েকটি ইজারা দেয়া হলেও প্রয়োজনে যেকোন সময় তা দখলে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে।
পূর্বের চেয়ারম্যানের দেওয়া নিয়োগকৃত কর্মচারী বাতিল করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কয়েকজন মাস্টাররোলের কর্মচারীর দায়িত্ব পাই নাই। এমনকি তাদেরকে পত্রের মাধ্যমে যোগদান করতে বলা হয়। কেউ কেউ আর দায়িত্ব পালন করেন নাই। সে কারণে শুণ্য পদে পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে অনিয়ম বা অর্থ বাণিজ্যের বিষয়টি ভিত্তিহীন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সাধারণ জনগণের কল্যানে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ভাবে যাতে ব্যবহার হয়। সেলক্ষ্যেই আমি কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার সন্দেহ হচ্ছে আমার পরিষদের আমারই সাথে অবস্থান করে কোন কোন সদস্য ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে আমাকে নানা ভাবে বিব্রত করা এবং হেও পতিপন্ন করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
তিনি বলেন, নিজেদের হীন স্বার্থ পূরণের লক্ষ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর যে বিষয়ের অবতারনা করেছেন আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।