নিজস্ব প্রতিবেদক
ঝিনাইদহে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়ে হাতের কাছে সেবা পেয়েও কর্মকর্তাদের কৌশল ও দুর্ভিসন্ধির কারণে সেবা প্রত্যাশিদের প্রথম যেতে হয় দালালদের কাছে। দালাল ছাড়া আবেদন করতে গেলেই যেন ভোগান্তির শেষ নেই। সূত্র জানিয়েছে, ফাইল প্রতি ১১০০ টাকা নেয় অফিস। দিন শেষে কতগুলো ফাইল জমা হয়েছে সেটার হিসাব করে যার যার পার্সেন্টেজ তার তার কাছে পৌছে যায়। তবে স্বচ্ছতা দেখাতে ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসে নিয়ম ও কাননের কমতি নেই। অফিসের দেওয়ালে দেওয়ালে ছাটা আছে “ দালাল দের থেকে সাবধান”‘ অনৈতিক অর্থ লেনদেন থেকে বিরত থাকুন’ ‘বিনা কারণে প্রবেশ নিষেধ’ ইত্যাদি পোস্টার। তবে কাজ হয় কোডে। দালাল ধরে আবেদন করলে ফাইলের বিশেষ জায়গায় দালাল একটি কোড লিখে দেন। সেই কোড (বিশেষ চিহ্ন) দেখেই অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক সোহেল রানা বুঝে যান এটা কোন দালালের মাধ্যমে এসেছে। হিসাব লিখে ফেলেন। ফাইলে যতো ত্রæটিই থাকুক কোন বাধা ছাড়াই মুহুর্তেই হয়ে যাবে আপনার কাজ। কিন্তু যদি আপনার ফাইলে কোন কোড না থাকে তাহলে ফাইলে হাজারটা ভুল ধরে আবেদন পত্র ফেরত দিবে। আপনার আইডি কার্ড ঝাপসা, আপনার পেশা কৃষি কেন, আপনার রাস্তার নাম গ্রামের নামের আগে হয়ে গেছে! নাগরিক সনদের অরজিনাল কপি লাগবে, আইডি কার্ডের বড় ফটোকপি নিয়ে আসেন! ইত্যাদি ভুল ধরে চলবে আপনাকে ভোগান্তি করার চেষ্টা। কেউ যদি সহকারী পরিচালকের কাছে যান তাহলেও বিশেষ কোন লাভ নেই। তিনিও তার স্টাফদের যুক্তিই সঠিক বলে আপনাকে বলবে ঠিক করে নিয়ে আসতে। সূত্র জানিয়েছে, জেলার গুরুত্বপূর্ণ অনেক টেবিলেই ভাগা যায় ফাইলের অতিরিক্ত টাকার। যেকারণে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ নেই। জানাগেছে, প্রতিদিন দুই শতাধিক ফাইল জমা হয়। এর মধ্যে রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুপারিশ থাকে ১০ থেকে পনেরটি। দালাল ছাড়া আবেদন পড়ে ১০-২০টি বাকি সব গুলোই দালালদের কোডের মাধ্যমে জমা হয়। দালালদের চুক্তি থাকে ভেরিফিকেশন পর্যন্ত। ডিএসবি থেকে ফোন গেলে নাম্বারটি দালালের কাছে দিয়ে দিলেই সব ঝামেলা শেষ। এক্ষেত্রে ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠা রেগুলার ডেলিভারি করতে সব মিলিয়ে দালালদের দিতে হয় ৭ হাজার টাকা যেখানে সরকারি খরচ ৪০২৫ টাকা, জরুরি নিলে সরকারি খরচ ৬৩২৫ টাকা কিন্তু দালালদের দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। পাসপোর্ট অফিসের কথা হয় আব্দুল্লাহ নামে এক যুবকের সাথে। তার বাড়ি মহেশপুর। আবেদন করতে কোন দালাল ধরেনি। ফিঙ্গার দিতেই তার ৩দিন ঘুরতে হয়েছে বলে জানাই। এদিকে, পাসপোর্ট অফিসে ঢুকতে গেলেই আনসার সদস্য (নিরাপত্তা কর্মী) আপনাকে আটকে দিবে। আপনার নিজের আবেদন না হলে আপনাকে ঢুকতে দেবে না। অর্থাৎ বাড়তি লোক ঢুকতে দেওয়া হয়না । অথচ রবিবার দুপুর বেলা দেখা গেল জনি নামের এক দালাল কয়েকটি ফাইল নিয়ে তথ্য কেন্দ্রে আবেদন জমা না দিয়ে চলে গেলেন উপরে। আর কাস্টমারদের নিয়ে যাওয়া হলো ফিঙ্গার দেওয়ার কক্ষে। পাসপোর্ট অফিসের পাশে যেকোন দোকানে ফি’র টাকা জমা দিতে গেলেও দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ সাকাওয়াত হোসাইন এবছর হজ করে ফিরেছেন। তাই অনিয়মের টাকা হাতে না ছুয়ে চামচ দিয়ে নেন বলে পাসপোর্ট অফিসের সামনে এক দোকানদার জানান। এই দোকানদার বলেন, কিছুদিন আগে দুদক কিছু ফোঁস ফোঁস করলেও তাদের সাথে চুক্তি পাকা হয়ে গেছে। বড় বড় কর্মকর্তাদের ড্রাইভারেরা আসেন। অফিসের নিয়ম-কানন খুব কঠোর দেখালেও গোপন কোডের মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা যাচ্ছে সিন্ডিকেটের হাতে। সহকারী পরিচালক মোঃ সাকাওয়াত হোসাইন বলেন, আমরা প্রতিদিন শতশত লোককে হ্যান্ডেল করি। সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারিনা তারাই অভিযোগ করেন। আমরা স্বচ্ছ ভাবেই কাজ করি। এদিকে, সেবা নিতে আসা ৯৮% মানুষ সন্তুষ্ট নয় পাসপোর্ট অফিসের উপর। রবিবার দুপুরে পাসপোর্ট অফিসের সামনে থেকে মিলন হোসেন, রাসেল হোসেন, তাজ ইমতিয়াজ আহমেদ, তারেক মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন সেবা প্রত্যাশি বলেন, দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পাসপোর্ট করাকেই মানুষ নিয়ম হিসাবে মেনে নিয়েছে। আপনি প্রতিবাদ করতে গেলেই আপনাকে সমস্যায় পড়তে হবে। মানুষ পাসপোর্ট করতে আসে জরুরি প্রয়োজনে তাই কেউ ঝামেলায় পড়তে চায় না। সেই কারণে টাকা বেশি লাগলেও দালাল ধরে। তারা সংবাদ কর্মীদের বলেন, লেখালেখি করেও কোন লাভ নেই। এখানকার টাকা সবাই পায়। লিখলেও টাকা খাওয়া বন্ধ হবে না। ঝিনাইদহের সচেতন মহল পাসপোর্ট অফিসের দালাল সিন্ডিকেট ভেঙে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে সরকারের উচ্চ মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।