সবুজ, ঝিনাইদহ-
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার অসহায় মানুষের পাশে যে মানুষটির সর্বক্ষণ নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, তিনি হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আক্তার পিংকি খাতুন। তিনি এ পর্যন্ত পরিষদ থেকে সম্মানী ভাতা বাবদ যত টাকা পেয়েছেন, তা খরচ করেছেন অসহায় মানুষের কাজে। সাদিয়া আক্তার পিংকি খাতুন ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর উপজেলা নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। পিংকি খাতুনই বাংলাদেশের সর্ব প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের জনপ্রতিনিধি। দেশের অবহেলিত একটি গোষ্ঠী থেকে উঠে আসা পিংকি খাতুন এখন এলাকায় মানবতার ফেরিওয়ালা হিসাবে পরিচিত।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো চেষ্টাও করা হয়েছে তাকে। তারপরও সব বাধা উপেক্ষা করে এলাকার দুস্থ অসহায় মানুষের পাশে আছেন সর্বক্ষণ। তাছাড়াও কোটচাঁদপুর যুব মহিলা লীগের উপজেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
সাদিয়া আক্তার পিংকি খাতুন, নির্বাচিত হওয়ার আগেই কথা দিয়েছিলেন উপজেলার গরীব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের চোখের পানি মুছে দিবেন, সত্যিই এখন অসহায়দের বেঁচে থাকার পথ দেখাচ্ছেন তিনি। সবার কাছে তিনি এখন গরীবের অর্থনীতিবিদ বন্ধু ও বিপাদের কান্ডারি হিসেবে পরিচিত। তিনি সামর্থ্য থাকা পর্যন্ত কাউকে কখনো খালি ফিরত দেন না। করোনা কালিন সময়ে গরীব-দুঃখী মানুষের যা করেছেন, তা কখনো ভোলার নয়।
তিনি যে কাজ গুলো বেশি বেশি করে থাকেন ও পছন্দ করেন তা হলো, একজন অসহায় পরিবারের মেয়ের অর্থের অভাবে বিবাহ হচ্ছে না, তিনি সাথে সাথে ব্যবস্থা করে দেন। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব দুঃখী ও অসহায় মানুষের মুখের খাবার তুলেদেন। ধর্মীয় উৎসবে অসহায়দের মাঝে তুলে দেন শাড়ি, লুঙ্গি। হাড় কাঁপানো শীতে নিজে অসহায় দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেন কম্বল কম্বল। এছাড়া হুইল চেয়ার, চিকিৎসা সেবার খরচ, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ও মন্দিরে পূজা উপলক্ষে নিজ অর্থ থেকে অনুদান দিন। দান করতে পছন্দ করেন তিনি, অসহায় মানুষের বিপদ দেখলে তিনি স্থির থাকতে পারেন না। মানুষের বিপদের কথা শুনলেই ছুটে যায় তার বাড়িতে, এমনকি মৃত্যুর সংবাদ শুনলে ছুটে যান মরহুম- মরহুমার বাড়িতে, পরিবারের সান্তনা দেন ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
এছাড়াও উপজেলার শিশু ও উঠতি বয়সি যুবকদের মাঝে খেলার সামগ্রী বিতরণ এবং তাদের খেলার মাঠ পরিচর্যার জন্য নিজ অর্থ ব্যায় করে থাকেন। যেন উঠতি বয়সি যুবকেরা বিপথে না যায়। প্রতি নিয়ত সে বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়জিত রেখেছেন।
বর্তমান ঝিনাইদহ টিভির একান্ত স্বাক্ষাৎকারে পিংকি খাতুন জানান- আমার মা-বাবা নেই, তারা মারা গেছেন। এলাকার সাধারণ মানুষই আমার মা-বাবা, আমার সবকিছু। সে কারণে তাদের পাশে থাকতে পারলে আমার ভালো লাগে। আর তাই উপজেলা পরিষদ থেকে আমার প্রাপ্য সন্মানী ভাতা বাবদ যে টাকাগুলি পাই সমস্ত টাকা আমি তাদেরই পিছনে খরচ করি। একটি টাকাও আমি নিজ প্রয়োজনে খরচ করি না। কারণ এ সকল অসহায় মানুষের বিপদ দেখলে আমি স্থিও থাকতে পারি না। উপজেলার এ সকল মানুষের ভালবাসায় আজ আমি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। পিংকি খাতুন আরো বলেন- আমি নিজেই একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। আমি বুঝি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মনে যে কি কষ্ট। তাই তারা যাতে সমাজে মাথা উচুঁ করে বাঁচতে পারে সে বিষয় নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও তিনজন প্রতিবন্ধী, একটি মা হারা দুগ্ধজাত শিশু’র সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিয়েছি। এদের খরচ আমি আমার সম্পদহ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে করে থাকি। এ সকল অসহায় মানুষের জন্য আমি আরো কিছু করতে চাই। কিন্তু আমার সাধ আছে সাধ্যে নাই।