পাওনাদারের চাপে ভাতিজার কাছে ভিটে-বাড়ি বিক্রি; অতঃপর বাড়ি না দিতে চক্রান্ত ও হয়রানি মামলার অভিযোগ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমান গোলাম মোস্তফা। এরপর থেকে একের পর এক পাওনাদারেরা আসতে থাকে বাড়িতে। স্বামী বিদেশে গেছেন আস্তে আস্তে টাকা পরিশোধ করবেন বলে শান্তনার বুলি ছুঁড়ে পাওনাদারদের বিদায় করতেন স্ত্রী যমুনা খাতুন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন ? বিদেশে যাওয়ার সময় ব্যাংক থেকেও নেওয়া হয়েছে লোন। এই লোনের কিস্তি দিতে গিয়ে অন্যদের পাওনা আর দেওয়া হয় না। অতঃপর চাহিদা মেটাতে এক-এক করে আবাদী জমি বিক্রি করতে থাকেন গোলাম মোস্তফা দম্পতি। সুযোগ নিয়ে একই দেশ সৌদিতে থাকা বড় ভায়ের ছেলে মোঃ সুজাত কিনতে থাকে সেই জমি। সিমিত পরিমাণে থাকা মাঠের জমি বিক্রি করেও পাওনাদারের টাকা শোধ করতে অক্ষম হয়ে ভিটে-বাড়ি বিক্রির শুর বুঝেছিলেন ভাতিজা সুজাত। এজন্য নিজের স্ত্রীকে দিয়ে ব্যাংক থেকে ৬ লক্ষ টাকা লোন করে চাচা গোলাম মোস্তফা দম্পতির পাশে থাকার সুকৌশল অবলম্বন করেন ভাতিজা সুজাত। ইচ্ছা ছিলো চাচা ভিটা-বাড়ি বিক্রি করলে তিনিই নিবেন। এদিকে চাচি যমুনা খাতুনও কৌশলবাদী কম নন! দেনার দায়ে ভিটে-বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে, সুজাতের পরিবারকে গোপন রেখে মেজো ভাসুর আব্দুল গফুর মন্ডলের ছেলে মাসুদের স্মরণাপন্ন হন তিনি। বড় ভাসুর আব্দুর রহমানের ছেলে প্রবাসী সুজাতের কাছে দেনা থাকায় এবং কিস্তিতে টাকা নিতে হতে পারে এটা ভেবেই তিনি এই কৌশল অবলম্বন করেন। যে কারণে মাসুদের কাছে বাড়ি বিক্রি করার সময়, কাউকে না জানাতে শর্তও দিয়েছিলেন চাচি যমুনা খাতুন। মোটা অংকের দেনা আর পাওনাদারদের চাপ ঠেকাতে, সুজাতের কাছ থেকে কিস্তিতে টাকা নিয়ে তিনি সামলাতে পারবেন না বলেই তিনি সুজাতের কাছে বাড়ি বিক্রি করতে চাননি। এর আগে পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে কাউকে না জানিয়ে বড় ভাইয়ের ছেলে সুজাতের কাছে জমি বিক্রি করা নিয়ে ঐ পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য চলে আসছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভিটে-বাড়ির ২২ শতক জমি ৩৫ হাজার টাকা দামে ৭ লক্ষ ৭০ হাজার এবং বাড়ি নির্মাণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা মোট ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ঠিক করে ভাতিজা মাছুদ রানার কাছে বিক্রি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন গোলাম মোস্তফা দম্পতি। এসময় চাচি যমুনা খাতুন নগদ ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে রেজিষ্ট্রি করার সময় বাকি টাকা নিবেন বলে তার নিজ হাতে সাক্ষরসহ তিনজন সাক্ষীর সাক্ষরে একটি ষ্টাম করা হয়। পরে বাকি টাকা পরিশোধ করে মাছুদ রানা ঐ বাড়ি দখল করে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কথা বললে, চাচি যমুনা খাতুন বাড়ি ছেড়ে দিয়ে বাবার বাড়ি কুষ্টিয়া চলে যেয়ে, বিভিন্ন তাল বাহানা শুরু করতে থাকেন। একপর্যায় তিনি বাড়ি বিক্রি করেন নি বলে অস্বীকার এবং ঐ বাড়ি থেকে তাকে মারধর করে জোর পূর্বক বের করে দেওয়া হয়েছে বলে একেরপর এক বিভিন্ন অভিযোগে মামলা করেন মাসুদ রানাসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এমনি এক অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ভুক্তভোগী
মাসুদ রানা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পুড়াহাটি ইউনিয়নের হিরাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল গফুর মন্ডলের ছেলে। এ ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম এলাকায় খোঁজ নিয়ে মিথ্যা মামলার স্বীকার মাসুদ রানার পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে যমুনা খাতুনের কাছে ফোন দিলে তিনি দুই ঘন্টা পরে ফোন দিতে বললেও পরবর্তীতে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
মাসূদ রানা জানান, আমার চাচি আমার কাছে জমি বিক্রি করতে চাইলে প্রথমে নিতে না চাইলেও অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দিলে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কাই আমি নিতে চায়। এছাড়াও বাড়ি বিক্রি করা, টাকা লেনদেন সংক্রান্ত সকল তথ্য ভিডিও এবং অডিও ক্লিপ রেকর্ড করে সংরক্ষণ করা আছে। প্রয়োজনে তিনি সকল তথ্য সামনে আনবেন। যমুনা খাতুনকে মারধর করে বের করে দেওয়ার প্রশ্নে তিনি এলাকাবাসীর কাছে খোঁজ নিতে বলেন। তিনি বলেন, যমুনা খাতুন আমার আপন চাচি অর্থাৎ মায়ের সমতুল্য। তাকে মারধর করার প্রশ্নে আমাকে অবাক হতে হয়েছে। যা আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, আমার চাচি অন্য কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই কান্ড ঘটাচ্ছেন বলে আমরা ধারনা করছি। হয়তো পূর্ব থেকেই এই বাড়ি তারা কিনবেন বলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
টাকা লেনদেন এবং ষ্টাম্পে সাক্ষী দাতা রঞ্জু বলেন, আমার হাত দিয়েই এই বাড়ি বিক্রির টাকা নেন যমুনা খাতুন। কিন্তু তিনি বাড়ি থেকে চলে যেয়ে কেনো অস্বীকার করছেন তা আমার বোধগম্য নয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে যমুনা খাতুনের মেয়ে বলেন, বাড়ি বিক্রি করলেও ছোট টিনের ঘরটিতে আমার মাকে থাকতে দেওয়ার কথা ছিলো এ কথা বলেই তিনি ভোল্ট পাল্টে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়। তিনি বলেন, আমরা মাছুদ ভায়ের কাছ থেকে টাকা হাওলাত নিয়েছি, বাড়ি বিক্রি করিনি।
এবিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার এস আই রোকনুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনীর টহল টিমের সাথে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মাসুদ রানার কাছে বাড়ি বিক্রি করেছেন বলে কিছু লিখিত ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে এবং মাসুদ রানা ঐ বাড়িতে উঠলে যমুনা খাতুন স্ব ইচ্ছায় বাড়ি থেকে চলে গেছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোলাম মোস্তফা দেশে থাকতে এনজিওতে চাকরি করতেন। এসময় ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তি তুলে অফিসে জমা না দেয়া এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদের টাকা নিয়ে তিনি এসব দেনা হয়েছেন।