ঝিনাইদহ থেকে-
অভিনব কৌশলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ও চন্ডিপুরের তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ৩ প্রতারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারকদের সঠিক নাম ঠিকানা না জানায় প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা দ্রুত আইনগত সেবাও পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। ভুক্তভোগীরা হলেন, সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত হুজুর আলীর ছেলে অহিদুল ইসলাম, একই গ্রামের মৃত ছামছদ্দির ছেলে লিটন হোসেন ও চন্ডিপুর বাজারের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। আলাদা আলাদা ভাবে এদের কাছ থেকে মোকলেচুর রহমান, গোলাম রহমান ও ফয়সাল নামে তিন ব্যাক্তি প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ তাদের। ভুক্তভোগী অহিদুল ইসলাম জানান, তার কাছ থেকে ৩ মেয়াদে ২৫ লাখ টাকা, লিটনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ও সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় তারা। এর মধ্যে অহিদুল ইসলাম ১ লাখ টাকা ০১৯৫৬৮১৫০০০ নগদ একাউন্টে পাঠিয়েছেন এবং বাকি টাকা নগদ লেনদেন করেছেন কালীগঞ্জ শহরে বসে। এ বিষয়ে মুরগী ব্যবসায়ী অহিদুল ইসলাম কালীগঞ্জ থানায় লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার বক্তব্য মতে, প্রতারক ফয়সাল অহিদুলের কাছে মুরগী ব্যবসার অফার নিয়ে আসেন। ফয়সাল তাকে জানিয়েছে তার ভাই বাংলাদেশ ব্যাংকের বড়ো কর্মকর্তা। সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৪০টি করে মুরগীর বাচ্চা ও ১০ কেজি করে খাবার দেওয়া হবে। এই বিশাল কার্যক্রম ডিলারদের মাধ্যমে করা হবে। বিরাট লাভ হিসাব করে লোভে পড়ে যান অহিদুল ইসলাম। তিনি যোগাযোগ বাঁড়ান ফয়সালের সাথে। ফয়সাল তাকে কালীগঞ্জ শহরে তার বসের কাছে ডেকে নিয়ে যান। কালীগঞ্জে যেয়ে ফয়সালের বস মোকলেচুর রহমান ও গোলাম রহমানের কাছে নতুন ব্যবসার ধারণা পান। তারা তাকে বিশ্ববিখ্যাত রোলেক্স ব্রান্ডের ঘড়ির ব্যবসার অফার করেন। এই ব্যবসায় ইনভেস্ট করলে লাখে ৩০ হাজার লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখান তারা। ভারতের বাজারে এই ঘড়ির বিশাল বাজার রয়েছে মর্মে ব্যবসায় ইনভেস্ট করতে বলেন। কয়েকদিন পরে ভারত থেকে কাস্টমার এসেছে বলে তাকে ডেকে নিয়ে ৩০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের রোলেক্স ব্র্যান্ডের ২৮৪টি ঘড়ির অর্ডার কনফার্ম করেন ভারতীয় ঐ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। সেখানে ভারতীয় ঐ ব্যবসায়ী ৩ কোটি টাকার ইসলামী ব্যাংকের চেক প্রদান করেন। বাকী ৩ কোটি টাকা তিন প্রতারক ও ব্যবসায়ের অংশীদার হিসেবে অহিদুল ইসলামকে ম্যানেজ করার কথা বলেন। বিশাল লাভ দেখে ফান্ড জোগাড়ে রাজি হয়ে যান অহিদুল ইসলাম। একপর্যায়ে কোরআন শপথ করে ব্যবসায়ের লাভ সমান ভাগে ভাগ করে নেবে মর্মে অঙ্গিকার করে তারা। প্রথমে ৪ লাখ ও পরে গত ২৬ ফেব্রয়ারি ২০ লাখ টাকা তাদের হাতে দেন। এরপর আরও টাকা চাইলে নগদ একাউন্টে (০১৯৫৬৮১৫০০০) এক লাখ টাকা দেন। টাকা নেওয়ার পর থেকেই গোলাম রহমানের ব্যবহৃত নাম্বার ০১৭৪৬২৮৫১৬০ ও ফয়সালের ব্যবহৃত ০১৯৫২০০২৪৯৮ এবং ০১৮৭৬৫৯৯২৮৯ নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। তখন অহিদুল ইসলাম বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কালীগঞ্জে তাদের সাথে দেখা করার জায়গায় খোঁজ নিতে গিয়ে লিটন হোসেন ও সিরাজুল ইসলামের সাথে ঠিক একই ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে বলে জানতে পারেন। পরে তাদের সাথে একমত হয়ে থানায় অভিযোগ করেন। এবিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আবু আজিফ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে জানতে পেরেছি তারা যে নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছেন তা ভুয়া। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা তদন্ত করছি।
এই বিষয়ে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ও র্যাবের পদক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।