প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলাম এখন সকল সুপারদের গুরু, টাকা দিলেই অসম্ভবকে সম্ভব!

নিজস্ব প্রতিবেদক-

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে আবুবক্কর বিশ্বাস মোকসেদ আলী মহিলা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেনো অন্ত নেই। নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, প্রতিষ্ঠানে এটেনডেন্ট অনিয়মিত, টাকার বিনিময়ে কাগজপত্র জালিয়াতি করে অসম্ভব কে সম্ভব করা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য এক শক্তির ভয়ে মুখ খুলছেন না উপজেলাবাসী। এমন অভিযোগের সত্যতা জানতে মাদরাসাটিতে একাধীকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার পিছে থাকা অদৃশ্য শক্তির ভয়ে কেউ কথা বলতে না চাইলেও প্রতিবেদক যেনো নাছোড়বান্দা। অবশেষে ক্যামেরার সামনে বা নাম না প্রকাশ করার শর্তে মুখ খুললেন একাধিক ব্যক্তি। এসব ব্যাক্তিদের বক্তব্য থেকে উঠে আসে প্রিন্সিপাল নজরুলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ। তিনি নিজ কর্মস্থলের বাইরে কি কাজ করেন বেরিয়ে আসে তার ফিরিস্তি। অনিয়মকে নিয়ম করতে তিনি এতটাই দক্ষ যে, উপজেলার প্রায় সব মাদরাসার অফিসিয়াল খুঁটি-নাটি সমস্যার কথা কানে পৌঁছা মাত্রই নিজ দায়িত্বে তিনি ছুটে যান সেখানে। মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন করানো, স্কেল পরিবর্তন, কর্মচারী নিয়োগ, সভাপতির সাথে দেন-দরবার এবং অডিটের জন্য ঘুষের টাকা লেন-দেনসহ সকল সমস্যার সমাধান যেন তার হাতে নিমেষেই সমাধান। এসকল সমস্যার সমাধান পেতে উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসার সুপাররা টাকার বান্ডিল নিয়ে তার পিছে দিনরাত ঘুরতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন করানোর জন্য মাথা পিছু প্রায় ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন তিনি।এদিকে নিজ প্রতিষ্ঠানে তিনি গড়ে তুলেছেন একক ত্রাসের রাজত্ব। জানা গেছে, কালিগঞ্জের প্রভাবশালী এক নেতার  সাথে যোগসাজস করে প্রায় ১১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ল্যাব অপারেটর পদে মেহেদী নামে একজন কে নিয়োগ দেন। আত্নীয়করণের দিক দিয়েও তিনি বেশ দায়িত্বশীল! অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দিয়েছেন তার আত্মীয় মাসুম বিল্লাহকে। অভিযোগ রয়েছে এই মাসুম বিল্লাহকেও দুর্নীতির পথ অবলম্বন করেই দেওয়া হয়েছে নিয়োগ। নিয়োগ সার্কুলার ও বৈধ কাগজ-পত্র ছাড়াই বহাল তবিয়তে আছেন মাসুম বিল্লাহ। তিনি যোগদান করেন, চলতি বছরের ২০ মে। এদিকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে শরিফুল ইসলাম ও ল্যাব সহকারী পদে নাহিদ তানভীরকে নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। এভাবে একই পদে একাধীক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার বৈধতা কি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্যদের কাছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এসব অবৈধ পথ অবলম্বন করে তিনি কালিগঞ্জ শহরে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল চারতলা বাড়ি। এছাড়াও তার নিজ গ্রামে চাষের জমি কিনেছেন প্রায় ৩০ বিঘা। এলাকাবাসী জানান, দুনীর্তিবাজ এই অধ্যক্ষ এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলামের কাছে প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। বরং বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি বলেন, নিউজ করেন আমার কিছুই হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার কয়েকটি মাদরাসার সুপাররা প্রতিবেদক কে জানান, হুজুর নিজ হাতে সব লেনদেন করেন, কাজও ভাল বোঝেন, এ কারনে ঝামেলা এড়াতে উপজেলার প্রায় সবকটি মাদরাসার সুপাররা তাকে দিয়েই কাজ করান এবং গুরু মানেন। জানা গেছে হুজুর প্রায় সময় ঢাকায় থাকলেও এতে তার কোন ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া তিনি যখন ঝিনাইদহে থাকেন বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন মাদরাসায় পরিদর্শন করে বেড়ান। যে কারণে তার নিজ প্রতিষ্ঠান দেখতে হয় সহকারী সুপারের। অনুকূল পরিস্থিতি না থাকায় তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে এতো দিন কেউ কথা না বললেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। তারা এই দুর্নীতিবাজ প্রিন্সিপালের পদত্যাগ দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজহারুল ইসলাম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যদি তিনি এধরণের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকেন, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top