প্রিন্স হাসপাতালের করা রক্তের গ্রুপ নির্নয়ে ভুল! অল্পের জন্য বেচে গেলো প্রবাসীর প্রসূতি স্ত্রী ও পেটের শিশু

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-

ঝিনাইদহের প্রিন্স হাসপাতালের রক্তের গ্রুপ রিপোর্টের ভুলে অল্পের জন্য বেচে গেলো রোজিনা খাতুন (৩০) নামে এক প্রবাসীর গর্ভবতী স্ত্রী ও তার গর্ভের শিশু। রোজিনা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের প্রবাসী মোঃ চাতকের স্ত্রী।

জানা গেছে, গেলো বছরের ২৫ ডিসেম্বর ঐ প্রবাসীর স্ত্রী গর্ভবতী থাকা অবস্থায় শারীরিক ভাবে অসুস্থতা বোধ করলে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ব্লাড গ্রুপ নির্ধারনের জন্য ব্লাড পরীক্ষা করাতে বলেন। সেসময় সদর হাসপাতালের ল্যাব বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স থেকে পরিক্ষা করানো হয়। এতে তার ব্লাড গ্রুপ “বি-পজেটিভ” বলে রিপোর্ট দেন তারা। এর ২দিন পর ২৭ ডিসেম্বর রোজিনা খাতুন আবারো শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেসময় তিনি প্রিন্স হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ব্লাড গ্রুপ, সিবিসি, এইসবিএস, আরবিএস সহ ৬টি রিপোর্ট করানোর জন্য বলা হয়। এসময় প্রিন্স হাসপাতালের নিজস্ব ল্যাব থেকে রিপোর্ট গুলো করানো হলে, ব্লাড গ্রুপ রিপোর্টে দেখা যায় “ও-পজেটিভ” এসেছে। তবে বাচ্চা ডেলিভারি হতে দেড় মাস টাইম থাকায় সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে প্রিন্স হাসপাতাল থেকে ঐ প্রবাসীর স্ত্রী বাড়িতে চলে যান। পরে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে ডেলিভারির সময় হলে তাদের কোন এক আত্মীয়ের পরামর্শ অনুযায়ী রাবেয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীকে সিজার করার আগে পুর্বের করা ব্লাড গ্রুপের রিপোর্ট দুই রকম হওয়া দেখে সন্দেহ হলে, পুনরায় রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রিপোর্ট করান। সেখানকার রিপোর্টে রোগীর রক্তের গ্রুপ “বি-পজেটিভ” আসে। পরে সন্দেহ কাটাতে আরও এক জায়গায় রিপোর্ট করালে সেখানেও “বি-পজেটিভ” আসে। পরে রোগীর রক্তের গ্রুপ “বি-পজেটিভ” হবে বলে নিশ্চিত হয়ে ঐদিন রাত ১০ টার দিকে রাবেয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে সিজার করেন। সিজারের পরের দিন ৮ জানুয়ারি ঐ রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে “বি-পজেটিভ” রক্ত পুষ করানো হবে বলে জানান রোগীর শাশুড়ি চায়না বেগম। এ বিষয়ে প্রবাসীর মা চায়না বেগম জানান, ভাগ্যিস বাচ্চা ডেলিভারি হতে দেড়মাস দেরি ছিলো! নইলে প্রিন্স হাসপাতালে রোগীকে সিজার করালে, তারা যে রক্তের গ্রুপ নির্ধারনে ভুল করেছিল, তাতে রোগীকে সিজারের পর যদি ভুল রক্ত পুষ করানো হতো, এতদিন আমার ছেলের বউ এবং তার সন্তানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তো।

এবিষয়ে প্রিন্স হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট সিদ্ধার্থ বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে, তিনি রক্তের গ্রুপ নির্নয়ে ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেন। তবে এই ভুলের কারণ হিসেবে তার অদক্ষতা বা মেশিনারি সমস্যা ছিলো কি না, সে বিষয়ে তিনি মুখ খোলেননি।

জেনারেল ম্যানেজার মোখলেছুর রহমান বকুল জানান, মানুষের শরীরে কোন কোন সময় রক্তের গ্রুপ চেন্জ হতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে খুবই কম দেখা যায়। তাছাড়া একজন মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্নয়ে ভুল করা এবং ভুল রক্ত পূষ করা মানে তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া। তিনি বলেন, রক্তের গ্রুপ নির্নয়ে ভুল করার কোন সুযোগ নেই।

প্রিন্স হাসপাতালের মালিক আলমগীর হোসেন জানান, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে আমি জেনে পরে জানতে পারবো।

স্বাস্থ‌্য সেবাকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য সেবায় মানব দেহের সবগুলো পরিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। তন্মধ্যে ব্লাড গ্রুপ নির্নয় অন্যতম। সেক্ষেত্রে উন্নতমানের মেশিনের সাথে প্রয়োজন দক্ষ টেকনোলজিস্ট। তা না হলে এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের ভুলে রোগীর কোনো সমস্যা হলে তার দায়ভার প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top