ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৮নং পাগলাকানাই ইউনিয়নের বানিয়াকান্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের “প্রতিভা” শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে । স্কুলটির পরিচালনা ও শিক্ষিকা হিসেবে ক্লাস নিতে দেখা গেছে, বানিয়া কান্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলতাফ হোসেনের স্ত্রী তাছলিমা খাতুনকে। বুধবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাদান পদ্ধতি চালু করলে ২০১৮ সালে তাছলিমা খাতুন নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। প্রথম পর্যায়ে তাছলিমা খাতুন নিজ বাড়িতে স্কুলটির কার্যক্রম শুরু করেন। বাড়িকে ঝামেলা মুক্ত করতে পরে বানিয়া কান্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘর নিয়ে সেখানে ক্লাস নিতেন। এরপর করোনা কালীন সময়ে এনজিও থেকে প্রকল্পটির কার্যক্রম বাদ দেওয়া হলেও ঐ নামেই তিনি স্কুলটি চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, এনজিও প্রতিষ্ঠানের এ কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে প্রকল্পের এরিয়া ম্যানেজার ইকবাল হোসেন নিয়মিত স্কুলটির খোঁজ খবর নিতেন। কিন্তু বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখায় এর কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিভা প্রাক-প্রাথমিকের কার্যক্রম বন্ধ করা হলেও স্বামী আলতাফ হোসেনের সহযোগিতায় সরাসরি বানিয়াকান্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমে তিনি প্রকল্পের নাম ভাঙিয়ে স্কুলটি দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছেন। সকাল ৭টা থেকে শুরু করে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসার ৫ মিনিট আগে তিনি প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ছুটি দেন। বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নাহারও অবগত আছেন বলে জানান ঐ কথিত শিক্ষিকা। এ ব্যাপারে তাছলিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী আলতাফ হোসেন এখানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রধান শিক্ষককে অবহিত করেই এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আপনাদের এব্যাপার নিয়ে কোন নিউজ করার দরকার নেই। তাছাড়া প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসার আগেই তো আমি ক্লাসরুম ফাঁকা করে দিই। এবিষয়ে বানিয়াকান্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফন নাহার দুষছেন সহকারী শিক্ষক আলতাফ হোসেনকে। তিনি বলেন, আলতাফ হোসেন নিজেই তার স্ত্রীকে অনুমতি দিয়েছেন। আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। তবে শুনেছি আজ থেকে মাস দুয়েক আগে থেকে আলতাফ হোসেনের স্ত্রী ছোট বাচ্চাদের ওখানে পড়ালেখা করান। এদিকে একই স্কুলে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদানে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা পড়েছেন বিপাকে। একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের অভিযোগ এই যে, একই টাইমে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে আবার ঐ টাইমে তাদের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশ করতে হচ্ছে। যে কারণে প্রাথমিকের শিশুদের মন খারাপ হচ্ছে। স্কুল শেষে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা বাবা মায়ের কাছে অভিযোগ করছে যে, প্রাক প্রাথমিকের স্কুল আগে ছুটি দেয় আমি ঐ স্কুলে পড়বো। এছাড়াও একই এলাকার দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হওয়ায়, তারা একে ওপরের খেলার সাথীকে স্কুল থেকে আগে যেতে দেখেও তাদের মন খারাপ হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শুধাংসু কুমার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানিনা, তবে খোঁজ নিবো, যদি এরকম কোন অসংগতি থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে বেসরকারি এনজিওর প্রোগ্রাম পরিচালনা করার সুযোগ নেই। তারা যদি প্রাক-প্রাথমিকের বাচ্চাদের পাঠদান করান সেক্ষেত্রে স্কুলের বাইরে গিয়ে করাতে হবে।