শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:
‘আপনার স্বেচ্ছায় রক্তদান, বেঁচে যাবে একটি প্রাণ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০২০ সালের ১০ মার্চ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার একঝাঁক উদ্যমী তরুণ প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক ব্লাড ব্যাংক’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি সেবামূলক সংগঠনটি সফলতার সঙ্গে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত ৩ শতাধিকের বেশি ব্যাগ রক্তদান করা হয়েছে। দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে মানবিক সংগঠনটির। তারা দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
মহামারী করোনাভাইরাসেও ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে শয্যাশায়ী রোগীকে রক্তদানের জন্য ছুটেছেন সংগঠনের কর্মীরা। যা ছিল এক ভূয়সী প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই কার্যক্রমটি এখনো সক্রিয় আছে।
চলতি মাসের ১৬ জানুয়ারি মাগুরা জেলার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সুমাইয়া নামের একজন সিজারিয়ান রোগীর হঠাৎ ওপজেটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন হয়। তাঁর স্বজনেরা ফেসবুকের মাধ্যমে রক্ত চেয়ে পোস্ট দেন। বিষয়টি নজরে আসে ওই গ্রুপের মডারেটর নিতাই রায়ের। তিনি দ্রুত মাগুরা শহরে গিয়ে ওই রোগীকে রক্ত দেন।
সুমাইয়া খাতুনের বাবা সাহেব আলী বলেন, ‘আমার মেয়ের রক্তের গ্রুপ দুর্লভ। দ্রুত পাওয়া যায় না। ওকে সুস্থ রাখতে দ্রুত রক্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পাচ্ছিলাম না। তখন ফেসবুকে পোস্ট দিই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শৈলকুপা উপজেলা থেকে নিতাই রায় নামের একজন যোগাযোগ করেন। তিনি হাসপাতালে এসে আমার মেয়েকে রক্ত দিয়েছেন। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’
নিতাই রায় বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি ১৫ বার রক্ত দিয়েছি। রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমার এক ব্যাগ রক্তে যদি কোনো মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাহলে ক্ষতি কী? আমরা সুস্থ প্রত্যেক মানুষকে আহ্বান জানাই রক্ত দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান।’
সংগঠনের সভাপতি মো. রাকিবুল খাঁন বলেন, ‘আপাতত সৎ ও সক্রীয় কর্মী সৃষ্টি করার মাধ্যমে রক্তদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখা এবং অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হচ্ছে রক্ত সরবরাহ ও সংরক্ষণে একটি নিবন্ধিত ব্যাংক তৈরি করা, যাতে যেকোনো মুহূর্তে সংরক্ষিত রক্ত অসুস্থ ব্যক্তিকে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়।’
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম বুরহান উদ্দীন বলেন, ‘আমরা সকল রক্তযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই, যাতে রক্তের অভাবে কোনো রোগী মারা না যান। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্যে। এছাড়া আমরা সকল মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে অনেক কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে শেষ করেছি। আগামীতে আরো অনেক স্বপ্ন আছে। ধাপে ধাপে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’