সবুজ মিয়া, ঝিনাইদহ-
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষাতে অসামান্য অবদান রাখায় জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা ২০২২-২৩ এ সম্মাননা পেয়েছেন মোছাঃ জেছমিন নাহার কামনা। রোববার সকালে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে এ সম্মাননা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের আয়োজনে খুলনায় “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সম্মাননা করা হয়। খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হেলাল মাহমুদ শরীর র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি (এমপি)। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক কেয়া খান, খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন, খুলনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিপিএম সেবা সুশান্ত সরকার এবং মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জাকিয়া আফরোজ।
অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা শেষে শ্রেষ্ঠ জয়িতা ৫ জন, রানারআপ ৫ জন ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৪০ জনসহ মোট ৫০ জনকে সন্মাননা প্রদান করা হয়।
মোছাঃ জেছমিন নাহার কামনার এই কৃতিত্বের কারণ হিসেবে যা তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, মোছাঃ জেছমিন নাহার কামনা প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন বড়বাড়ি বগুড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে । যেটা বর্তমানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়েছে। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার অধীর আগ্রহ ছিল। মা- বাবা দুজনেই নিরক্ষর হওয়ায় তাদের থেকে পড়াশোনার কোনো সাহায্য না পেলেও তারা তাগাদা দিতেন পড়ার জন্য। সেসময় পড়া বুঝতে অসুবিধা হলে এলাকার বড় ভাই- বোনদের থেকে পড়া দেখিয়ে আনার জন্য বাবা তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতেন ও তাদের অনুরোধ করতেন পড়াটা একটু দেখিয়ে দিতে। এছাড়াও পড়াশোনায় ভাল হওয়ায় তার অধিকাংশ শিক্ষক তার থেকে প্রাইভেটের টাকা নিতেন না। যদিও এখনকার ছেলেমেয়েদের মত প্রাইভেট পড়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। মাধ্যমিক পড়েন এলাকার স্কুল এ. আার. বি. নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। যেটা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। তখন সে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। কিন্তু এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরিক্ষা দেয় আউধা সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবং ২০০৫ সালে সাধারণ বৃত্তি পান যেটা তাদের এ. আার. বি. নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই প্রথম। পরবর্তীতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন কামান্না বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং ২০০৮ সালে তিনিই একমাত্র জিপিএ ৫ পান অত্র ইউনিয়ন থেকে। বাবার আর্থিক সংকটের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হন আবাইপুর যমুনা শিকদার কলেজে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশেনার জন্য যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দিবে এবং বই পত্র সবকিছু বিনামূল্যে দিবে এই মর্মে তাকে ভর্তি করার দরুন তার উচ্চ মাধ্যমিকটাও সহজ হয়। ২০১০ সালে ঐ কলেজ থেকে জেছমিন নাহার কামনায় একমাত্র জিপিএ ৫ পান। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন কোচিং এর জন্য ঢাকায় পা রাখেন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং এ ভর্তি হন। সেসময় ৫টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান এবং ২০১১ সালে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে বি. এস. সি. ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে টিউশনি করে নিজের খরচ ও ছোট ভাইদের টুকটাক পড়াশোনার খরচ চালিয়ে গেছেন কামনা । ২০১৬ সালে সিজিপিএ ৩.৯৩ (৪.০০) নিয়ে ফ্যাকাল্টিতে প্রথম হয়ে এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি শেষ করেন। যার দরুন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান জেছমিন নাহার কামনা। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ায় ২০১৬ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ২০২১ সালে এমএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম ( সিজিপিএ ৪.০০) পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন। জেছমিন নাহার কামনা জেলার শৈলকুপা উপজেলার ১০নং বগুড়া ইউনিয়নের বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের মোঃ কফিলুদ্দিনের মেয়ে।
মোছাঃ জেছমিন নাহার কামনার এই সাফল্য অর্জনে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ শৈলকুপাবাসী অভিনন্দন জানিয়েছেন।