শৈলকুপায় দলিল লেখকদের কর্মবিরতির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে একাধিক দূর্নীতির অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক-

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের পরস্পরবিরোধী অবস্থান, ঘুষ কেলেঙ্কারি, দলিল রেজিষ্ট্রি জালিয়াতি এবং দলিল লেখককে সাসপেন্ডের ঘটনায় দলিল লেখকদের কর্মবিরতি ধর্মঘট আজ অব্দি চলমান।

উপজেলার মধ্যে দলিল কমিশনে অতিরিক্ত ফি দাবি, দলিল রেজিস্ট্রির সময় নানা অজুহাতে দলিল প্রতি অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও দেরিতে অফিসে আসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত রোববার থেকে সাব রেজিস্টার ইয়াসমিন শিকদারের বিরদ্ধে এ কর্ম বিরতি শুরু হয়েছে বলে জানান দলিল লেখকরা।

এদিকে দলিল রেজিস্ট্রি না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে সাব রেজিস্টার ইয়াসমিন শিকদার তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে দীর্ঘ বছরের প্রচলিত নিয়ম পরিবর্তন করে অনৈতিক কর্মকান্ডে মৌখিক ও কাগুজে নিয়ম চালু করেন। আর এ কারণেই ক্ষুব্ধ হয়ে দলিল লেখকেরা প্রতিবাদস্বরূপ দলিল লেখা বন্ধ করে দেন। এভাবে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত এক সপ্তাহ যাবৎ দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ রয়েছে।

সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন শিকদারের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ তুলে দলিল লেখকেরা গনমাধ্যম কর্মিদের সামনে স্ববিরোধী বক্তব্য দেন। বৃহস্পতিবার (১ডিসেম্বর) অবধি এ কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। দলিল লেখকেরা সবাই সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি এক বাক্যে স্বীকার করে বলেন, তারা এভাবে আর ঘুষ দেবেন না। এতে তারা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তা বন্ধের ব্যাপারে ঐকমত পোষণ করে কর্মবিরতির আন্দোলন চালাচ্ছেন ।

এ বিষয়ে শৈলকুপা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কালিপ্রসাদ বিশ্বাস এবং আক্তারুজ্জামান খান মনির জানান, সাব রেজিস্টার ইয়াসমিন শিকদার শৈলকুপায় যোগদানের পর থেকে দলিল লেখকরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সমিতির নামে দলিল লেখকদের কর্মবিরতির বিষয়টিও স্বীকার করেন তারা।

এ বিষয়ে শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন শিকদার অনৈতিক সুবিধা, অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের অভিযোগ, ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক আক্তারুজ্জামান খান মনিরকে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সাসপেন্ড করায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে এ কর্মবিরতি পালন করছে।

সাব রেজিস্টার ইয়াসমিন শিকদার আরো বলেন, দলিল লেখকরা তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন এটা তাদের মনগড়া। তিনি সরকারি নিয়মের বাইরে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না বলেও দাবি করেন।

তবে সাব-রেজিষ্টার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সাব-রেজিষ্ট্রার ইয়াছমিন সিকদারের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ।

শৈলকুপা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের একজন দলিল লেখক রবিউল ইসলাম সাবু অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে লিখিত একটি দলিলে ঢাকায় কমিশন করে রেজিস্টার করতে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন সাব রেজিস্টার ইয়াসমিন শিকদার। অথচ এ কাজের সরকারি কমিশন ফি মাত্র ৯ হাজার টাকা।

অন্যদিকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন জানান, দলিল সনাক্তকারি মাহাবুবুল ইসলাম জুয়েল নামে একজন শিক্ষকের যোগসাজশে হাটফাজিলপুর ১৬৯ নং মৌজার প্রায় কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি ব্যাপক ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি হয়েছে। যার দলিল নং ৬০৪০/২১, রেজিষ্ট্রি তারিখ- ৩১/১০/২০২১, জমির পরিমান ২৯.৫০ শতক। জমিটি ক্রয় করেছেন, নাইমূল ইসলাম নোমান গং পিতা- ভূমিদস্যু নামে খ্যাত ফরিদুল ইসলাম ভুন্ডুলে এবং বিক্রয় করেছেন, রোকসানা ইসলাম লাবনী গং, পিতা- মৃত রেজাউল ইসলাম টুকু। এরা সবাই হাটফাজিলপুর গ্রামের বাসিন্দা। দলিল লেখক চর আউশিয়া গ্রামের মোঃ ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবুল আক্তার লিপিবদ্ধ করেন। যার সনদ নাম্বার ১৩২। তবে এ দলিলটি কোন অনিয়মের মধ্য দিয়ে সাব-রেজিষ্টার সম্পন্ন করেছেন, তার মূল তথ্য এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top