সবুজ মিয়া, ঝিনাইদহ-
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের যাত্রা শুরু হয়। তার আগে এটি যশোর-১ আসনের অন্তভূক্ত ছিল। ঝিনাইদহ-১ আসনে এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য পেয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের কামরুজ্জমান, আব্দুল হাই, নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার, বিএনপির আব্দুল ওহাব, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের দবিরুদ্দিন জোয়ারদার।
১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ১ম বারের মত সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের কামরুজ্জামান। তিনি ১৯৮৬-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৮ সালের ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন জাতীয় সমাজতন্ত্রিক দলের দবিরুদ্দিন জোয়ারদার। তিনি ১৯৮৮-১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালের ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একই সালের তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির আব্দুল ওহাব। ১৯৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
তারপর ২০০১-২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮ম, ৯ম, ১০ম, ১১তম ও ১২তম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের আব্দুল হাই। পরবর্তীতে আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে আসন শূন্য হলে আওয়ামী লীগের নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ্য সদস্য হন।
তাদের মধ্যে ১ম সাংসদ কামরুজ্জামান, ২য় সাংসদ দবিরুদ্দিন জোয়ারদ্দার ও সর্বশেষ সাংসদ নায়েব আলী জোয়ার্দার সরকার পতনের কারণে খুব বেশিদিন দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এতে করে শৈলকুপার উন্নয়নে বিশেষ কোন অবদান তারা রাখতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের আব্দুল হাই দীর্ঘ সময় এ আসন থেকে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিরোধী দল ও আওয়ামী আমলের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি প্রায় ২৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজও হয়েছে। তবে তার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেহাল সড়ক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে সুদীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকলেও জনগনের যতটুকু আশা ছিল তার সিংহভাগ পূরণ করতে পারেনি তিনি। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপি করে জয়লাভ সহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল।
শৈলকুপার উন্নয়ন হওয়ার কথা বলতে গেলে অধিকাংশই বিএনপির আব্দুল ওহাবের আমলে। তিনিই একমাত্র বিএনপি থেকে জনগণের সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি আমলের সরকার দলীয় ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন । তার আমলে অনুন্নত শৈলকুপা উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়। শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বহুমুখী উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে তার অবদান এখনও জনগণের মুখে মুখে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু, প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ, সড়ক নির্মাণ, সড়ক সংস্কার, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ, মসজিদ-মন্দিরে বিভিন্ন অনুদান প্রদানে তার বিশেষ ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
জানা যায়, বিএনপির এক সমাবেশে ভাগ্য পরিবর্তন হয় শৈলকুপার। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর শৈলকুপার পৌর ভবন নির্মাণ করে আব্দুল ওহাব। সেটি উদ্বোধন করতে তিনি আমন্ত্রণ জানান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। পৌরভবন উদ্বোধনের পর শৈলকুপা কলেজ মাঠে বিএনপির এক সমাবেশ হয়৷ সেখানে বেগম খালেদা জিয়াসহ সেসময়ের বিএনপি সরকারের ২৪ জনের অধিক মন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় পাঁচ লক্ষের মত লোকের সমাগম হয় এ সমাবেশে। সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিকট শৈলকুপা কলেজ সরকারীকরণ, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ, হাসপাতালে নতুন ভবন নির্মান, একাধিক ব্রীজ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের দাবিসহ শৈলকুপার উন্নয়নের নানা দাবি তুলে ধরেন ওহাব। সে সমাবেশের পরে পর্যায়ক্রমে দাবিগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন বেগম খালেদা জিয়া।
সমাবেশের ১৫ দিনের মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শৈলকুপা কলেজকে সরকারীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, খুলনা বিভাগে সর্বপ্রথম শৈলকুপায় ফায়ারসার্ভিস স্টেশন নির্মাণ, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ, ব্রীজ নির্মাণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিতে থাকেন বেগম খালেদা জিয়া। এসকল উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শৈলকুপায় বিএনপি ও আব্দুল ওহাবের নাম এখনও শৈলকুপার জনগণের অন্তর্স্থলে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে সংবাদ কর্মীদের কাছে তাদের মতামত তুলে ধরেন।