স্ত্রীর ব্যক্তিগত ড্রাইভারকে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন! অভিযোগ ফার্মের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি খামার ঝিনাইদহের দত্তনগর কৃষি খামার। জেলার মহেশপুর উপজেলায় অবস্থিত এ খামারটি ৫টি প্রজেক্টের আওতায় রয়েছে ২ হাজার ৭৩৭ একর জমি। ১৯৬২ সাল থেকে শস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এই খামারটি ব্যবহার করছে। জমিদার হেমেন্দ্রনাথ দত্তের খামারটি শস্য উৎপাদনে আজও অদ্বিতীয়। কিন্তু দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি ও লুটপাটে সুফল বয়ে আনতে পারে না। ৫টি ফার্মের মধ্যে একটি পাথিলা ফার্ম। প্রায় ২ বছর এই ফার্মে উপপরিচালক হিসেবে যোগদান করেছেন মোঃ কামাল উদ্দিন। কামাল উদ্দিনের নামে আগেও অনেক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন করে তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ উঠেছে। কামাল উদ্দিন তার স্ত্রীর ব্যবহৃত গাড়ির ড্রাইভারকে পাথিলা ফার্মের শ্রমিক দেখিয়ে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ মাস ধরে বেতন দিচ্ছেন। প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে এসব তথ্য। জানাগেছে, দত্তনগরের পাথিলা ফার্মের উপপরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিনের পরিবার ঝিনাইদহ শহরের ঝিনুক টাওয়ারে বসবাস করেন। তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের চলাচলের জন্য একটি ভিজেল প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৫০০৪) রয়েছে।

এই গাড়ি চালানোর জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় ঝিনাইদহ পৌরসভার উদয়পুর গ্রামের মোঃ ইনতাজ বিশ্বাসের ছেলে মোঃ রিপন বিশ্বাসকে। রিপন পেশাদার গাড়ি চালক। সে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। গত ৫ মাস রিপন বিশ্বাসকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর শাখা সোনালী ব্যাংকের একটি হিসাব থেকে বেতন দেওয়া হয়। এর আগে দত্তনগরের পাথিলা ফার্মের শ্রমিক হিসেবে রিপন বিশ্বাসের একটি স্যালারি একাউন্ট খোলা হয় জীবননগর সোনালী ব্যাংক শাখায়। গত মাসের শেষের দিকে রিপন বিশ্বাসের একাউন্টে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকার একটি ট্রানজেকশন হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানাই ভুলের কারণে এটি হয়েছে। এর মধ্যে রিপন বিশ্বাস আবার এই টাকা একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে খরচ করে ফেলে। যেকারণে বাধ্য হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ঝিনাইদহ শহরে টাকা উদ্ধারের জন্য আসতে হয়। রিপন বিশ্বাস মূলত পাথিলা ফার্মের উপপরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিনের স্ত্রীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক হলেও ফার্মের শ্রমিক দেখিয়ে তার বেতন পরিশোধের বিষয়টি সামনে আসে। অভিযোগ উঠেছে এমন অনেক নামে-বেনামে শ্রমিক সাজিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছেন ফার্মের কর্মকর্তারা। এলাকার সচেতনমহল বেতন পাওয়া শ্রমিকদের সত্যতা যাচাই করে দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। চালক রিপন বিশ্বাস প্রতিবেদককে বলেন, কামাল স্যার তাকে জীবননগর শাখার সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট করতে বলেন। আমি সেই ভাবে করেছি। আমি খামারে কাজ করিনা। কামাল স্যারের পরিবার থাকে ঝিনাইদহ শহরের ঝিনুক টাওয়ারে। আমি তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালায়। এবিষয়ে উপপরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, আমার হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছি। আমার ফার্মে দুইশতাধিক কর্মী কাজ করে। তবে রিপন বিশ্বাসকে আমি হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আমার বাচ্চাদের আনা নেওয়ার কাজ করায়। সরকারিভাবেই তার বেতন দেওয়া হয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। তিনি বলেন, এতে কোন অনিয়ম নেই। এবিষয়ে জানতে অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক একেএম কামরুজ্জামানের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top