
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডুতে হান্নান ওরফে কুসুম (১৮) নামে এক কিশোর তার দুলাভাই হাসানের হাতে হত্যা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতের যেকোনো সময় নরসিংদীর সিদ্ধিরগঞ্জে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। নিহত কুসুম উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের সাবেক বিন্নি গ্রামের জিন্দারের মোড় এলাকার মুকুল মন্ডলের সন্তান। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহত কুসুমকে সিদ্ধিরগঞ্জে জামাই হাসানের কাছে চাকরির উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিলেন বাবা মুকুল মন্ডল।
জানা গেছে, কুসুম বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে সন্তান। যেকারণে ছোট বেলা থেকেই বাবা-মা এবং একমাত্র বড় বোনের আদরে কিছুটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বেশকিছু দিন ধরে নিহত কুসুমের নামে এলাকায় চুরিসহ অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে। গত দুই আড়াই মাস আগে জিন্দারের মোড়ে লিমনের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান থেকে একটি মোবাইল চুরি হয়। এই চুরি হওয়া মোবাইলটি রাব্বুল নামে এক দোকানদারের কাছে বিক্রি করে কুসুম।
এ বিষয়ে জিন্দারের মোড়ের চায়ের দোকানদার রাব্বুল হোসেন জানান, গত দুই মাস আগে একটি মোবাইল ফোন বিক্রি করবে বলে কুসুম তাকে জানালে, তিনি দেড় হাজার টাকা দাম করে মোবাইল ফোনটি কেনে। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনের যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিলে লিমনের কাছে মেরামত করতে দেয়। লিমন মোবাইল ফোনটি দেখে তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল বলে দাবি করেন। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে শালিশ হয় এবং অভিযুক্ত কুসুম তার দুলাভাইয়ের কাছে ঢাকায় থাকায় শালিশ স্থগিত রাখা হয়।
এদিকে নিহতের বাবা মুকুল মন্ডল জানান, এলাকার বিভিন্ন লোক তার ছেলের নামে এ ধরনের অভিযোগ দেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে নরসিংদীর সিদ্ধিরগঞ্জে তার জামাই হাসানের কাছে ছেলেকে পাঠিয়ে দেন। হাসান সেখানে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে। এর দুইদিন পর ছেলেকে কে বা কাহারা মেরে ফেলেছে বলে তার কাছে খবর আসে। এরপর থেকে তার জামাইয়ের সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। রোববার একটি এ্যমবুলেন্সে হাসানের সাথে একই বাসায় থাকা শৈলকুপার একটি ছেলে তার মরদেহ নিয়ে আসে।
হাসান হরিনাকুন্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়নে লক্ষিপুর গ্রামের ইনছান বিশ্বাসের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, লাশ বহনকারী শৈলকুপার ঐ ছেলেটির কাছে জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহ হলে, হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশে খবর দেন তারা। তারা আরও বলেন, পুলিশ শৈলকুপার ঐ ছেলেটিকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে, হাসান তার শেলক কুসুমকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে।
পুলিশের সাথে লাশ সনাক্তকারীর একজন জানান, লাশের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত চিহ্ন দেখা গেছে। হাতের দুইটি নখ প্লাস দিয়ে উপড়িয়েও ফেলা হয়েছে।
এলাকার সচেতন ব্যাক্তিরা মনে করেন, কুসুমের নামে বিভিন্ন চুরির অভিযোগ এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে শালিশ হওয়ার খবর পেয়ে, হাসান তার শেলককে শাসন করতে যেয়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।
হরিনাকুণ্ডু থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিহতের হাত, পা ও মুখে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন মামলা করা হয়নি। তিনি বলেন, যেহেতু ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলায় তাই এখানে মামলা হয়নি। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেও প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছেন তিনি।