কথায় কান দিলে এতদূর আসতে পারতাম না : অনামিকা পোদ্দার

শৈলকুপা পরিক্রমা-

অনামিকা পোদ্দার। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত নিয়ে মাস্টার্স করছেন। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি স্তরে রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে নানা প্রতিকূলতা। আত্মবিশ্বাস আর কঠোর অধ্যবসায় তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। অনেকের কাছে তিনি পথপ্রদর্শকও বটে। তার জন্ম ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার নাদপাড়া গ্রামে। বাবা অমলেন্দু পোদ্দার, মা কানন বালা পোদ্দার। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছোট।

অনামিকা পোদ্দার বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে আমি। প্রথম দিকে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়তে যেতাম। কখনো যানবাহন পেলে সেটাতেও যেতাম। এভাবে প্রতিদিন হেঁটে যাতায়াতও কঠিন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এতে পরিবারও সায় দেয়। যদিও তখনো গ্রামের মেয়েরা বাইসাইকেল চালানো শুরু করেনি। আমিই সম্ভবত প্রথম বাইসাইকেলে স্কুলে যাওয়া শুরু করি। এ নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য শুরু হয়। পাছে লোকে কিছু বলে, আমি পেছনের লোকের কথায় কান দিইনি। বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতাম। নবম শ্রেণিতে ওঠার পর বিজ্ঞান বিভাগ নিই। ঝিনাইদহের শৈলকূপা পাইলট গার্লস স্কুল থেকে ২০১৩ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। এতে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। যারা আমার বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারেননি তারাই আমার রেজাল্টের প্রশংসা করেছেন। এরপর থেকে তাদের মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়। কয়েক বছরের ব্যবধানে মনমানসিকতার পরিবর্তন এসেছে।

তার বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার আগেই ২০১২ সালে বাবা মারা যান। লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া ওর জন্য তখন কঠিন হয়ে পড়ে। বড় দাদার উপার্জনেই ওদের সংসার চলত। ছোট দাদাও তখন লেখাপড়া করত। দুই দাদা ওকে লেখাপড়ায় উৎসাহিত করেন। কলেজে ভর্তি হয়। দাদা ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে যায়। ২০১৫ সালে শৈলকূপা সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। ওই বছর কোচিং ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। প্রথমবার কোথাও ভর্তি হতে পারেননি। এক বছর ঘরেই লেখাপড়া করে ভর্তির প্রস্তুতি নেন। মানুষের নানা সমালোচনা মুখে পড়েন। পরের বছর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। পড়ালেখায় মনোযোগী হন। স্নাতকে ভালো রেজাল্ট করেন।

এ প্রসঙ্গে অনামিক পোদ্দার বলেন, এ পর্যায়ে আসতে অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম করেছি। মানুষের সমালোচনায় যদি কান দিতাম তাহলে এতদূর আসতে পারতাম না। অনেকে অনেক কথা বলবে! কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, আমি সঠিক করছি নাকি বেঠিক, সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। সফল হলে ওই মানুষগুলোই প্রশংসা করবেন।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top