জ্বালানী তেলের পাশাপাশি ঝিনাইদহের কাঁচাবাজার যেতে চলেছে দারিদ্র সীমার বাইরে ! নজরে নেই বাজার মনিটরিং

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি পরিবেশের বিরূপ আচরণের সরাসরি প্রভাব পড়েছে কাঁচাবাজারে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে বাজারের সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। চাল থেকে শুরু করে কাঁচা মরিচ সবকিছুরই দাম বাড়তির দিকে। এ পরিস্থিতিতে সব চেয়ে বিপাকে পড়ছে মধ্যম আয়ের ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ দিনের মাথায় এর প্রভাব পড়েছে ঝিনাইদহের হাট-বাজারে। এ পরিস্থিতিতে দেখা মিলছেনা ভোক্তা অধিকারের বাজার মনিটরিং।

শনিবার (১৩আগস্ট) সকালে ঝিনাইদহের নতুন হাটখোলা বাজার, চুয়াডাঙ্গা স্ট্যাান্ড বাজার, ট-বাজার, হরিণাকুন্ডু স্ট্যান্ড বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে আরেক দফায় বাড়ানো হয়েছে চালের দামসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে চিনির বাজারেও। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে অন্তত ৬ টাকা। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমন অস্বাভাবিক হারে চিনির দাম বেড়েছে বলে দাবি করেছেন ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীরা।

গত সপ্তাহে ৭৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বাসমতি চাল মঙ্গলবার থেকে শুরু করে শনিবার পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। ৫৫ টাকার আটাশ চাল বিকি হচ্ছে ৬২ টাকায়, ৬৪ টাকার কাজল লতা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা এবং ৬৮ টাকার মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকা প্রতিকেজি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত ১৫-২০ দিনের মধ্যে চালের দাম বাড়ল দুই দফা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন এবং পরিবহনের কথা বলে এবারে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানালেন তাঁরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। কেজি প্রতি সবজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত। সেই সাথে মাছ-মাংস-ডিমের দামও হাঁকিয়ে নিচ্ছে দোকানিরা। সব মিলে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল মানুষ। সবজি বাজারে বিক্রেতাদের নতুন অজুহাত হিসাবে বলা হচ্ছে, পরিবহন খরচ বাড়ায় বেড়েছে সবজির দাম।
ঝিনাইদহের খুচরা বাজারে দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায় কেবল পিছিয়ে আছে পেঁপে। যেন এ সবজির দামে উৎপাদন, যোগান ও পরিবহনে বড় কোন প্রভাব নেই। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। পেঁপে ছাড়া বেড়েছে অন্য প্রায় সব ধরনের সবজির দাম।ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু ২৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মিঠাকুমড়া, ধুন্দল, পটল ও ভেন্ডি। শশার দাম পড়ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেগুনের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। প্রতি হালি লেবু ১২ থেকে ১৫ টাকা। এ হিসেবে সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব সবজির দাম গড়ে ৫-৮ টাকা বেড়েছে।
চালকুমড়ার পিস ৩৫ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, আমড়া ৪০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, বরবটির কেজি ৫০ টাকা,
এসব বাজারে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। এছাড়া কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। শুকনা মরিচের কেজি ৪৪০ টাকা। এদিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। প্রতি কেজি আদার দাম পড়ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। খোলা চিনি ৯০ টাকা আর প্যাকেট চিনি ৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডালের দাম ১৪০ টাকা। ভারতীয় মসুর বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। প্যাকেট আটার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। খোলা আটা ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা। ভোজ্য তেলেও কোনো সুখবর নেই। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২০৫ টাকা।
এসব বাজারে ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। হাঁসের ডজন ২০০ থেকে ২১০ টাকা। আর দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। মাংসের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা ও দেশি মুরগি ৩৪০ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস এবং খাসি ৯০০ টাকায়।
মাছের বাজারে ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। মাছ বিক্রেতারা বলেন, মাছের সরবরাহ আগের চেয়ে অনেক কমেছে।মাসের বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবাহ না হলে আমাদের তো কিছু করার থাকে না, আমরা ইচ্ছে করে কখনো দাম বাড়ায় না। ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যের দাম বাড়াচ্ছে। তারা সিন্ডিকেট করে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করছে। আমরা সাধারণ জনগণ তাদের কাছে জিম্মি।
ক্রেতা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিটি জিনিসের যে দাম তাতে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জ।অন্যদিকে বিক্রেতারা জানান, যেসব পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সে দামেই বিক্রি করছি। কাঁচামালের দামের ব্যাপারে তারা বলেন, বাজারে পণ্যের সরবরাহ কম হলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আমরা তো আর লস দিয়ে বিক্রি করতে পারিনা।
কাচাবাজার আড়োত মালিক মারুফ হাসান, সবজি বিক্রেতা লিটন, মাংস বিক্রেতা খলিল গাজী ও জয়নালসহ অন্যান্য বিক্রেতারা জানান, তেলের দাম বাড়ার কারণে সবজি, মাছ-মাংস, মুরগিসহ সব জিনিষ বাজারে আনার খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে খামারগুলোতে বেড়েছে মুরগির দামও। সব মিলিয়ে এসব কারণে সবজি,
মাস-মাংস, মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজার অস্থিরতার কারনে দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে খাদ্য ও নিত্য পণ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। তারা বলছেন, মূলতঃ ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করেই দ্রব্য মূল্যের বাজার বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকার থেকে বাজার মনিটরিং করলেই এর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top