ঝিনাইদহে পূর্ব ঘঠিত দ্বন্দ্বের সমাধানে থানা চত্বরে দু’পক্ষ নিয়ে বৈঠক; ওসির এক কথায় শালিস পন্ড

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহে পরোকিয়ার জেরে বাবা-ছেলেকে মারধরের প্রতিবাদে ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়কের মধুপুর চৌরাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়। গত রোববার রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ৯টা পর্যন্ত তারা ঝিনাইদহ টু মাগুরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে মধুপুর চৌরাস্তা থেকে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যেয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।

পরেরদিন সোমবার বিচারের দাবিতে সদর থানায় জড়ো হয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অর্ধশত নারী-পুরুষ ও অভিযুক্তের পরিবার। দুপুরে ঘটনাটি মিমাংসার জন্য সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন দু’পক্ষের লোকজন নিয়ে গোল ঘরে বসেন।

এসময় প্রথমে বাদি রাজকুমারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলতে বলেন ওসি। রাজকুমার তার মৌখিক বক্তব্য দেওয়াকালীন আদিবাসীদের নেতৃত্ব দেওয়া মুছা মেম্বার কথা বলতে যায়। সেসময় ওসি বলেন, “আপনার কাছে আমি শুনছি না”।

ওসির এমন কথায় তাৎক্ষণিক আদিবাসীদের নিয়ে বৈঠক ত্যাগ করেন মুছা মেম্বার। এতে মুহূর্তের মধ্যে পন্ড হয়ে যায় শালিস।

এর আগে গত মাস তিনেক আগে উত্তর কাষ্টসাগরা গ্রামের বিএনপি নেতা রেজাউল ইসলামের ছেলে আলিফ মাহমুদ নিলয় ও একই গ্রামের নিশান কর্মকারের স্ত্রী পূজা পরোকিয়ার টানে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সামাজিক চাপের কারণে দুই তিন পর নিলয় ফিরিয়ে দেয় পূজাকে। এর কয়েকদিন পর নিলয় ফের পুজাকে নিয়ে পালিয়ে গেলে সামাজিক ভাবে বসাবসির মাধ্যমে পূনরায় সমাধান হয় এবং পুজাকে আবারো ফেরত দেয় নিলয়।

থানা চত্বরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা জানান, বিষয়টি সামাজিক ভাবে সমাধানের সুত্রে নিশান কর্মকার পুজাকে নিয়ে আগের মত সংসার করতে থাকে এবং পরবর্তীতে যাতে ঝামেলা না হয় এরজন্য নিশান ও তার স্ত্রী পুজাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয় নিশানের পরিবার।

জানা গেছে সম্প্রতি নিশান তার স্ত্রী পুজাকে নিয়ে বাড়িতে এসেছে। সুত্র জানায়, পুজাকে ফের নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল নিলয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রোববার রাতে মধুপুর চৌরাস্তার পাশে নিলয় অভিযোগকারীদের মারধর করে।

নিশান কর্মকার কাষ্টসাগরা গ্রামের রাজকুমার কর্মকারের ছেলে। জাতীতে তারা আদিবাসী বলে জানা গেছে এবং পুজা পার্শ্ববর্তী পুড়াহাটি ইউনিয়নের চাপড়ি গ্রামের শুভেন্দু বিশ্বাসের মেয়ে।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার গত রোববার রাতে মধুপুর চৌরাস্তা থেকে নিশান চৌধুরী গরুর খাবার কিনে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ আলিফ তার গতিরোধ করে বাকবিতন্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাকে কিল ঘুষি মারতে থাকে।

এসময় খবর পেয়ে তার বাবা ছুটে এলে তাকেও মারধর করে নিলয়। পরবর্তীতে তারা প্রান বাঁচাতে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে বাড়িতে উঠলে, আলিফ আরোও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে। এসময় বাড়ির অন্যান্য নারীদের কাপড় চোপড় ধরে টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানি ঘটায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

বৈঠক থেকে একপক্ষ উঠে যাওয়ার বিষয়ে ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি কি এমন কথা বলেছি যে তাদের বৈঠক ত্যাগ করতে হলো। তিনি বলেন, একজনের অভিযোগ শোনার মধ্যে আরেকজন কথা বললে মনোযোগ হারিয়ে যায়। মিমাংসা বৈঠকে অন্যদের কথা অবশ্যই শুনবো, তবে প্রকৃত অভিযোগকারীর কথা আমাকে আগে শুনতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শান্তি স্থাপনের জন্য দু’পক্ষের নিয়ে বসেছিলাম কিন্তু একপক্ষ উঠে যাওয়ায় সমাধান করা সম্ভব হয়নি।

 

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top