টাকার বান্ডিলে নিয়োগ বোর্ড অন্ধ, সরকারি বেতন ভাতায় নেই বাঁধা! ভুয়া সনদে বাঁধাহীন চাকরি করছেন আসাননগর কুল্যাগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক মিকাইল
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের আসাননগর কুল্যাগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক মোঃ মিকাইল হোসেনের বিরুদ্ধে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি এই জাল সনদে নিয়োগ নিয়ে গত ১৪ বছর ধরে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এতে শিক্ষক মিকাইলের বেতন স্কেল হিসেব করে দেখা গেছে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেছেন। শিক্ষক মিকাইল ভুয়া নিবন্ধনে কিভাবে চাকরিতে প্রবেশ করলেন এ নিয়ে যেমন নিয়োগ বোর্ডকে টাকার বান্ডিল দেখিয়ে অন্ধ করার প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি সরকার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা এমপিও ভুক্ত করার সময় যাচাই বাছাই না করারও প্রশ্ন ছুঁড়েছেন সচেতন মহল। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন মহলটি। বিশেষ করে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা এমপিও ভুক্তির আওতায় আনার আগে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি যাচাই-বাছাই করে তারপর এমপিও ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। সচেতন মহলটি এও জানান, সরকার পক্ষ থেকে যদি এবিষয়ে কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অসাধু চক্রটি নির্মুল করা কখনোই সম্ভব হবে না। আর এই নিয়োগ বাণিজ্য রোধ করতে না পারলে একদিকে যেমন যোগ্যরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে অযোগ্যরা শিক্ষকতায় প্রবেশ করে শিক্ষাখাতের ধস নামাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। শিক্ষক মিকাইলকে বারবার নিয়োগকালীন নথিপত্র স্কুলে জমা দিতে বললেও তিনি জমা না দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছেন বলে আমাকে বিব্রত করছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারিনি এ ব্যর্থতার দায় আমি স্বীকার করে নিচ্ছি।
কোটচাঁদপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। ঘটনার বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি নোট করলাম। তবে এবিষয়ে সমস্ত তথ্য জেলা শিক্ষা অফিসে পাবেন। জেলা শিক্ষা অফিসার আমাকে বিষয়টি দেখতে বললে, আমি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।
অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক মিকাইল ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি ততকালীন প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ম্যানেজ করে চাকরিতে নিয়োগ নিয়েছেন এবং ২০১১ সালের ৩০ মার্চ এমপিও ভুক্তির আওতায় এসেছেন। তার ইনডেক্স নাম্বার ১০৫৫৯৪৩।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে শিক্ষক মিকাইলের নিয়োগকালীন নথিপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে দেন। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তার দেওয়া এনটিআরসিএ এর সনদ ওয়েবসাইটে খোঁজ করলে সনদধারীর কোনো তথ্য আসে না।
জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্বাস উদ্দিন বলেন, শিক্ষক মিকাইল জাল সনদে চাকরি করছেন এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। এবিষয়ে সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি ইস্যু করেছি। এতে কোটচাঁদপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিকে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে।