ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর বাজারের সার্ধশতবর্ষী কড়াইগাছ কাটতে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সমাজের সচেতন মহল। বাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখা গাছটি যাতে না কাটা হয় তার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয়রা। গাছটি নিলামের টেন্ডার প্রকাশের পর এলাকার বৃক্ষপ্রেমীদের পক্ষ থেকে এ আবেদনটি করা হয়।
এদিকে জনগণের পক্ষ থেকে বাধা আসায় বিপাকে পড়েন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা।
সংগত কারণেই ভবিষ্যতে গাছটির ডাল ভেঙে পড়ে অথবা গাছ উপড়ে যেয়ে কারো কোন ক্ষতি হলে তার দায়ভার নিতে হয় বৃক্ষ প্রেমিদের। দিতে হয় ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা।
জানা গেছে, সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের মধুপুর বাজারটির আনুমানিক বয়স দেড়শত বছর। এই বাজারের পেরিফেরির জায়গায় রয়েছে সার্ধশত বছর বয়সী রেইন্ট্রি কড়ই গাছটি।
ওই বাজারের স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ আশরাফ আলী ধারনা করে জানান, বাজারটি গড়ে ওঠার সময় বাজারের দক্ষিণ পাশে এই গাছের চারা রোপণ করা হয়। যা কালক্রমে অনেক বড় হয়েছে। বর্তমানে বাজারটিতে ২৫০ টির অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার একপাশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান এই গাছের ছায়া ভোগ করছে এবং গাছটি বাজারের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বাজারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও গাছটি অবদান রেখেছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত গাছের ডাল পড়ে বা ভেঙ্গে কারো কোনো ক্ষতি হয়নি।
তিনি জানান, গত জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রবল বৃষ্টির কারণে মাছ বাজারের পাশের একটি ছোট বট গাছ চাঁদনী ঘরের উপর হেলে পড়ে। আমরাও চাই এই হেলে পড়া গাছটি অপসারণ করা হোক। এ জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে সেই সময় অবহিত করা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা সরেজমিনে দেখতে এসেছিলেন।
এর আগে সদ্য পোস্টিং আসা ইউনিয়ন ভুমি অফিসের নায়েব কে সাথে নিয়ে এই কড়ই গাছটি ইউএনও সাহেবকে দেখান এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী চক্র। সেসময় কড়ই গাছটি হেলে পড়েছে এবং যে কোন মুহুর্তে উপড়ে যেয়ে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে বলা হয় ইউএনও সাহেবকে। অথচ এই কড়ই গাছটি পূর্বের থেকেই বেঁকে ছিল বলে বৃক্ষ প্রেমিকদের এবং কিছু প্রবীণ ব্যক্তিদের ভাষ্য।
পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হেলেপড়া বট গাছের সঙ্গে তরতাজা সবুজ কড়াই গাছটিও নিলাম আহবান করা হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর এই নিলাম আহ্বান হওয়ার কথা জানতে পেরে বৃক্ষপ্রেমীরা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। পরে ইউএনও’র আদেশে এলাকার ৬১ জন মানুষ ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে গাছটির ক্ষতিকর দিকগুলোর দায়ভার নিলে, ইউএনও বরাবর ঐ স্টাম্প প্রেরণ করেন ভুমি অফিসের নায়েব।
এলাকার বৃক্ষপ্রেমী এবং গাছের সুবিধাভোগীরা জানান, আমাদের মুচলেকা দেওয়ার পর গাছের টেন্ডার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কে বা কারা পরবর্তীতে উপরে যোগাযোগ করে ফের গাছটি কাটানোর পাঁয়তারা করছে। তারা বলেন, এই ঐতিহ্যবাহী গাছ রক্ষায় প্রয়োজনে আমরা যা যা করার তাই করবো তবুও এই গাছ কাটতে দেবনা।
এবিষয়ে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম জানান, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর আমি হঠাৎ জানতে পারি নালিশি কড়ই গাছটি পুনরায় টেন্ডার হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ইউএনও মহোদয়কে ফোন দিলে তিনি বাজার কমিটির সভাপতির নিকট জানতে বলেন। বাজার কমিটির সভাপতির নির্দেশেই পুনরায় টেন্ডার দেয়া হচ্ছে বলে জানান ইউএনও।
বাজার কমিটির সভাপতি জানান, মুচলেকা দেওয়ার পরও গাছটি কেন আবার টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে তা আমি জানিনা। তবে গতকাল ইউএনও মহোদয় আমাকে ডেকেছিল মুচলেকা ফেরত নেওয়ার জন্য। সেসময় তিনি আমাকে বলেন ডিসি সাহেব মুচলেকা গ্রহণ করেননি আগের ঐ টেন্ডার পুনর্বহাল করেছেন। এসময় আমি তাকে বলেছিলাম এটা সরকারি গাছ আর আপনারা সরকারি মানুষ। আপনারা যদি গাছ কাটেন তাহলে আমার কোন অসুবিধা নেই।
স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, তিনি অল্পদিন এখানে যোগদান করার পর বট গাছটি হেলেপড়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিনে এসে গাছটি দেখতে অনুরোধ করি। তিনি সরেজমিনে দেখে গাছ নিলাম আহবান করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কড়ই গাছটি না কাটার জন স্টাম্পের মুচলেকায় ৩নং সাক্ষর আমি করেছি। আমি চাই ঐতিহ্য ধরে রেখে সবুজ কড়ই গাছটি বেঁচে থাক।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
