ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহ সদরে পোড়াহাটি ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা জামে মসজিদের খতিবের প্রতি মুসল্লিরা অনাস্থা প্রকাশ করলেও তিনি জোর করেই ইমামতি করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও ইমাম মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ধর্মীয় গুরুরা বলছেন, একের অধিক মুসল্লিরা যদি ইমামের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে তবে ঐ ইমামের উচিত নিজে থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে মুসল্লিদের কাতারে এসে বসা। কিন্তু মসজিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসল্লি যেখানে ইমাম মানতে নারাজ, সেখানে কিভাবে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন তা সম্পূর্ণ আকারে শরিয়ত পরিপন্থী।
জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গা জামে মসজিদে বিগত ১৯৮৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ঐ গ্রামের লিয়াকত হোসেন। এলাকার মুসল্লিদের অভিযোগ একই সাথে তিনি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ উত্তর কাষ্টোসাগরা আলিম মাদরাসার সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। মাদ্রাসার সুপার হওয়ায় তিনি এলাকায় মানুষ মারা গেলেও সঠিক সময়ে থাকতে পারেন না। এতে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হলেও তিনি আসতে দেরি করায় নামাজের জানাজা ও কবরস্ত করতে দেরী হয়। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে সময় দিতে পারেন না। যে কারণে প্রতিনিয়ত এলাকার ধর্মীয় কাজে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ঐ মসজিদের মুসল্লি সাইফুজ্জামান হাসু বলেন, লিয়াকত হোসেন ইমাম থাকায় পূর্ব থেকেই আমাদের ধর্মীয় বিভিন্ন কাজে সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। এ সমস্ত সমস্যার কথা তুলে ধরলে সেসময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা হুমকি ধামকি দিয়ে বলতো, যতো সমস্যাই হোক না কেন লিয়াকত ই ইমামতি করবে। তাই এ সমস্ত সমস্যা মেনে নিয়ে তার ইমামতিতেই নামাজ পড়তে হয়েছে।
স্থানীয় আয়ুব হোসেন জানান, গত রমজানে এলাকাবাসী ঠিক করেছেন খতম তারাবি পড়ার জন্য। এজন্য গ্রামের রানা নামে একজনের ছেলে হাফেজ হওয়াই তিনি বলেছেন, কোন টাকা পয়সা ছাড়াই আমার ছেলে খতম তারাবি পড়াবে। এই সিদ্ধান্তে একমত হলে দুইজন হাফেজ তারাবির নামাজ পড়াই। পরে ইমাম লিয়াকত তারাবির নামাজে টাকা পাবেনা বলে ২৭ রমজানে হাফেজদের নামাজ পড়াতে না দিয়ে তিনি শেষের ১০টি সুরা নিজে পড়ান। এনিয়েও মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ঐ মসজিদের আরো কয়েকজন বলেন, আগামী শুক্রবারে ইমাম লিয়াকত নামাজ পড়াতে এলে আমরা ঐ মসজিদে নামাজ পড়তে যাবো না। এই ইমাম বাদ না দিলে প্রয়োজনে অন্য মসজিদে নামাজ পড়বেন বলেও জানান তারা।
এবিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান ডিক বলেন, বিষয়টি আমি জানি। এনিয়ে বসাবসি করে ইমাম সাহেব কে যাতে সম্মানের সাথে বিদায় দেওয়া যায়, তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
মসজিদের মুসল্লিরা ইমামের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করলে ইমামতি করা যায় কিনা প্রশ্ন করলে, খতিব লিয়াকত কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, গত ৮৪ সাল থেকে দায়িত্ব নিয়ে এই মসজিদ টিনের ছাউনি থেকে বর্তমান দুই তলা করা হয়েছে। এসব কিছু আমার নিজের হাতে করা। কেন আমার বিরুদ্ধে তারা খারাপ মন্তব্য করেছেন তা আমার বোধগম্য নয়। বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে এলাকাবাসী নির্ধারিত সময়ে তাকে না পাওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি সবাইকে জানিয়ে রেখেছি যে আমাকে প্রয়োজন হলে একদিন আগে জানিয়ে রাখতে। কারো মৃত্যুর খবর একদিন আগে কিভাবে মানুষ জানতে পারবে এই প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। এতো সমালোচনার পরেও সামনের শুক্রবারে তিনি নামাজ পড়াতে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকাবাসী যেটা চায় সেটাই হবে।
এ ঘটনায় সামনের শুক্রবারে ইমাম লিয়াকত নামাজ পড়াতে গেলে এলাকায় সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।