র-ক্ত-মা-খা কাপড় সঙ্গে নিলেও আলামত জব্দ করেনি পুলিশ: ভাড়াটিয়া

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণের শিকার মেয়েকে নিয়ে প্রথমে র‍্যাব ক্যাম্পে যেয়ে বিচার চেয়েছিলেন বাবা। কিন্তু ঘটনাটি যেহেতু শৈলকুপা এলাকার যে কারণে র‍্যাব ক্যাম্প থেকে তাকে শৈলকুপা থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। র‍্যাবের পরামর্শ অনুযায়ী কিশোরীকে শৈলকুপা থানায় নিয়ে গেলে জিজ্ঞাসাবাদের আগে থানা পুলিশ কিশোরীকে একটি ইঞ্জেকশন পুষ করে। এতে প্রায় আধাঘণ্টা কিশোরীর মানুষিক ও শারীরিক অবস্থার বিপর্যয় ঘটে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাবার সামনে গেলে কিশোরীর চেহারা দেখে বাবা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেসময় পুলিশ ভাড়াটিয়াকে জানিয়েছিলেন যে, আপনার স্ত্রী তো দেহব্যবসা করে! একথা শুনে ভাড়াটিয়া আরো ভেঙ্গে পড়েন। সেই রাতে ভাড়াটিয়া তার ১০ বছরের ছোট ছেলেকে নিয়ে পুরো রাত মশার কামড় আর নিদ্রাহীন ভাবে থানা আঙ্গিনার গোল ঘরেই কাটিয়েছিলেন। আর মেয়ে পুলিশ হেফাজতে ছিল। পরেরদিন ছেলে-মেয়েকেসহ সেই রক্তমাখা কাপড় নিয়ে ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসেন। ভাড়াটিয়ার এক ছেলে ও এক মেয়ে তারা দুজনেই বর্তমান বাবার কাছে থাকে।

ভাড়াটিয়া জানান, ঐ রক্তমাখা কাপড় একজন সাংবাদিক ভিডিও করেছিলেন। পরে তার স্ত্রী ফরিদা পারভীন “সবুজ কালারের সেই রক্তমাখা ওড়নাটি” পরিস্কার করে বালিশের কভার বানিয়েছিল। তবে কাপড়টি পরিস্কার করলেও তাতে রক্তের দাগ লেগেই ছিল। যেকারণে আলামত গায়েব করতে ভাড়াটিয়ার স্ত্রীর সহযোগিতায় ঐ এলাকার বাচ্চুর স্ত্রী এবং আরেকজন নারী সেই রক্তমাখা কভারটি সরিয়ে ফেলে। এভাবেই কেঁদে কেঁদে ভাড়াটিয়া ঘটনার বর্ণনা দেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলেন, আমার আয় রোজগারের একটি মাত্র ভ্যান তাও এই মামলা করতে ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমি দুটি ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। আপনারা আমার একটা ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেন।

এদিকে শৈলকুপা থানা পুলিশ ঘটনার তদন্তে কিশোরীকে দুইবার মেডিকেল করালেও কেন আলামত জব্দ করলেন না এই নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তাছাড়া দুইবার কেনো মেডিকেল করতে হল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে দুইবার মেডিকেল করার প্রশ্নে তদন্ত অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, মেডিকেল একবারই করানো হয়েছে। ডাঃ স্টেটমেন্ট নিতে ভুলে যাওয়ায় পরে আরেকদিন কিশোরীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা আলামত চেয়েছি কিন্তু মামলার বাদী ধর্ষণের আলামত দিতে বা দেখাতে পারেনি।

মেডিকেলের বিষয়ে কিশোরী জানিয়েছে, আমাকে দুই বার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং দুই বারই একই ডাঃ একই ভাবে মেডিকেল করেছে।

এবিষয়ে অনেকে ধারণা করছেন, প্রথম মেডিকেল রিপোর্ট হয়তো পজেটিভ হয়েছে। পরে মিমাংসার স্বার্থে তা নতুন করে মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

ভাড়াটিয়া জানান, আমাকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি মিমাংসা করতে চাপ সৃষ্টি করে। পরে কোর্টে নিয়ে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় মিমাংসার কথা বলে আমাকে ভয় দেখিয়ে স্টাম্পে সই করে নেয়। এসময় আমাকে নগদ ২০ হাজার টাকা দিলে পরে বাচ্চুর কাছে ২০ হাজার টাকাই ফেরত দিয়ে দিয়েছি।

এদিকে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সাংবাদিকরা বার বার কৌশলগত প্রশ্ন করলেও বার বারই কিশোরী জানিয়েছে, সে তার মায়ের কারনে প্রকৃতই ধর্ষণের শিকার হয়েছে শরিফ ও সন্ন্যাসীর কাছে।

এসময় ঐ কিশোরী আরো জানায়, শরিফের সাথে প্রথম দিনের বিভৎস সেই রাতের কথা মনে করে, পরের ঘটনায় সন্ন্যাসীর কাছে যাইতে চাইছিলেন না সে। কিন্তু কান্নাকাটি করেও সে রক্ষা পায়নি। মা তাকে ধমক দিয়ে সন্ন্যাসীর কাছে যেতে বাধ্য করেছে। ঐদিন যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে কিশোরী তার বাবার কাছে বলতে বাধ্য হয়। বাবা তার মেয়ের ধর্ষণের কথা সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে ও ধর্ষণের আলামত নিয়ে ছুটে যায় র‍্যাব ক্যাম্পে।

উল্লেখ্য- গত ৮ মার্চ ঐ কিশোরীকে উপজেলার দুধসর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে শরিফ নামে এক ব্যক্তি ধর্ষণ করে। এর সপ্তাহ খানেক পর ঐ ভাড়াটিয়া বাসা স্থানান্তর করে কুলচারা এলাকায় গেলে সেখানেও একই ভাবে সন্ন্যাসী নামে আরেক ব্যক্তি ধর্ষণ করে বলে ভুক্তভোগী জানান। এ মামলায় সন্ন্যাসীক গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top