লম্পপটের চোখে প্রবাসীর স্ত্রী! ধর্ষণ, ধর্ষণের ছবি ধারণ অতঃপর ব্লাকমেইল

বিশেষ প্রতিবেদক-

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের পর অশ্লীল ছবি তুলে সামাজিক গনমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে মিরন ও সুজন নামে দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের বাহিররয়েড়া গ্রামে ঘটেছে বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত দুই বন্ধু একই গ্রামের আলাউদ্দিন অরফে আলার ছেলে মিরন (২৫) ও কালামের ছেলে সজিব (২৪)। এ ঘটনা জানাজানি হলে প্রথমে শৈলকুপা থানা পুলিশের কাছে ভরসা হারিয়ে পরে ঝিনাইদহ আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ঐ ভুক্তভোগী নারী।

ভুক্তভোগী ও স্বজনদের মাধ্যমে জানা গেছে, বাহিররয়েড়া গ্রামের জনৈক প্রবাসী গত ৩বছর আগে সংসারের অভাব অনটন দুর করতে সৌদি আরব গোমন করেন। এর বছর দুই পরে ঘটনার সুত্রপাত হয় প্রবাসীর স্ত্রীর একটি মোবাইল নষ্ট হওয়াকে কেন্দ্র করে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জানান, আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নষ্ট হয়ে গেলে আমি আমার শশুরকে জানায়। তিনি পাশের বাড়ির মিরনের ফোন সম্পর্কে ধারণা থাকায় তার কাছে নিয়ে যেতে বলেন। শশুরের কথা মতো প্রবাসীর স্ত্রী মিরনের কাছে মোবাইল ঠিক করতে যায়। এভাবে তিন চার দিন মোবাইল ঠিক করে দেয় মিরন। পরে মিরন এবং সুজন দুই বন্ধু মিলে প্রবাসীর স্ত্রীকে ফোন করে উত্তক্ত এবং কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে তারা প্রবাসীর স্ত্রীকে ফলো করতে থাকে।

ঐ প্রবাসীর বড় ভায়ের স্ত্রী পারভিনা জানান, আমাদের বাড়ির ভেতরে নেটওয়ার্কের প্রব্লেম আছে, যে কারণে প্রতিদিন রাতে তার দেবরের সাথে কথা বলতে পুকুরের পাড়ে যেতো তার দেবরের স্ত্রী। তিনি অনুমান করে বলেন, তার দেবরের স্ত্রী প্রতি রাতে পুকুর পাড়ে কথা বলে এটাই তাদের সুবর্ন সুযোগ ভেবে নেয় মিরন ও সুজন।

প্রবাসীর বোন জানান মূলত আমাদের ভাবির সাথে এমন ঘটনা ঘটিয়ে তারা দিনের পর দিন টাকা নেওয়ার ফাঁদ পেতেছে। তাছাড়া ভাবি ১৫ বছর ধরে আমাদের বাড়িতে সংসার করছে এমন কোন খারাপ দিক আমাদের চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা ভাবি খারাপ হয়েগেছে ভেবে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম পরে বিস্তারিত জেনে বুঝতে পারলাম তার সাথে ব্লাকমেইল করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সঠিক তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিচার দেখতে চাই।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে ভুক্তভোগী জানান, গত রমজান মাসে তার স্বামীর সাথে কথা বলার জন্য আনুমানিক রাত দশটার দিকে বাড়ির উত্তর পাশের পুকুর পাড়ে যায়। এসময় হঠাৎ করে একজন তার মুখ চেপে ধরে এবং অন্যজন তাকে উঁচু করে পুকুরের গাভিতে নিয়ে যেয়ে জোর পূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে তিনি মিরন ও সুজন কে চিনে ফেললে তারা এ ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে তাকে এবং তার ছেলে মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এছাড়াও ধর্ষণের অশ্লীল ছবি তুলে তার প্রবাসী স্বামী কে দেখানো সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ভয় ভিতি দেখায়। পরে জীবন বাঁচাতে ওদের সমস্ত কথায় রাজি হয়ে সেখান থেকে দৌড়ে বাড়িতে চলে আসে।

এরপর থেকে ঐ অশ্লীল ছবিকে পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তার স্বামীর কাছে পাঠানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে একের পর এক টাকা নিতে থাকে মিরন ও সজিব। সর্বশেষ নগদ টাকা আর না থাকায় মাস খানেক আগে গরু বিক্রি করে ১লাখ টাকা দেওয়া সহ সর্বমোট ৩ লক্ষাধিক টাকা তারা দুই বন্ধু মিলে তাকে জোর পূর্বক ধর্ষণের পর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করে নিয়েছে বলে ঐ প্রবাসীর স্ত্রী দাবি করেন।

এদিকে ছেলে মেয়ের জীবন রক্ষা, ঘটনা সম্পর্কে তার স্বামী জানতে পারলে সংসার ভাঙ্গাসহ মিরন ও সজিবের হাত থেকে মান সম্মান বাঁচাতে তিনি দিনের পর দিন মানুষিক চাপে প্রেশান হয়ে পড়েন। এভাবে প্রবাসীর ঐ স্ত্রী সর্বশান্ত হয়ে পড়ার পরেও তারা ক্ষ্যন্ত হয়নি। সর্বশেষ বিদেশ যাওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা দাবি করলে তিনি ছাপ ছাপ আর টাকা দিতে পারবেনা এবং ইমুতে বার বার নক করলেও কথার জবাব না দেওয়ায় মিরন ও সজিব আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গত মাসের ২৪/২৫ তারিখে প্রবাসীর স্ত্রীর ইমু নাম্বারে একটা অডিও বার্তা দেন। যে অডিও বার্তাটি পাঠানোর দুই একদিন আগে প্রবাসী তার স্ত্রীর ইমু একাউন্টের সাথে গ্রুপিং করায় প্রবাসীর ইমুতে চলে যায়। যে অডিও বার্তাটি প্রশাসনের তদন্তের সুবিধার জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন তিনি।

এদিকে স্ত্রীর ইমুতে এমন অডিও বার্তা পেয়ে প্রবাসী তার স্ত্রীর কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে, প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা তার স্বামীকে খুলে বলেন। এমন ঘটনা শুনে তার স্ত্রীকে প্রথমে বাড়ি থেকে বের করে দিলেও পরে প্রবাসী তার স্ত্রীকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিলে গত ২৬ তারিখে শৈলকুপা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। শৈলকুপা থানা পুলিশের কাছে আস্থা হারিয়ে পরে ঝিনাইদহ কোর্টে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ঐ প্রবাসী ও তার ভুক্তভোগী স্ত্রী।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিরন জানান, আমি এ ধরনের কোন কর্মকান্ডের সাথে লিপ্ত হয়নি। তিনি ও তার পরিবার আরোও জানান, আমাদের সাথে পূর্ব থেকেই তাদের শত্রুতা যে কারণে উদ্যেশ্য প্রনোদিত ভাবে তাদের ফাঁসাতেই এই অভিনয় সাজিয়েছে প্রবাসীর পরিবার। অভিযুক্ত সজিবও একই ভাবে বলে জানান, তারা যদি এধরনের কোন কর্মকান্ড করে থাকে তবে প্রমাণ দেখাতে হবে।

শৈলকুপা থানা পুলিশের এসআই ও এই অভিযোগের আইও সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ করার পরে জানতে পারলাম বাদী পক্ষ কোর্টে মামলা করেছেন। যে কারণে তদন্তের স্বার্থে একদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও অভিযোগপত্র স্থগিত করা হয়েছে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top