শৈলকুপায় স্বামীর বিরুদ্ধে পুড়িয়ে মারতে চেষ্টার অভিযোগ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
মাত্র দুই মাস বিয়ের বয়স হয়েছে। আপন মামাতো ফুফাতো ভাই বোনের সম্পর্ক থাকায়, বিয়ের শুরু থেকেই নববধু হিসেবে কোন নতুনত্ব অনুভব করতে হয়নি রিতুর। বিয়ের পরদিন থেকেই শাড়ীর আঁচল মাজায় পেঁচিয়ে শাশুড়ির (আপন ফুফু) সাংসারিক কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন রিতু। কিন্তু প্রতিদানে পেয়েছিলেন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা আর শাশুড়ির দাঁতের চিবুনী।

কাজ শেষে স্বামীর দিন হাজিরা যেদিন আনতে পারেনি সেদিন খাবারের ঘরে তালা ঝুলিয়েছেন শাশুড়ি। অভাবি সংসারে একদিকে যেমন শাশুড়ির নির্যাতন, অন্যদিকে স্বামীর শারীরিক অত্যাচার।

তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। বাহিরের লাইট না জ্বালিয়ে ক্ষুধার্ত আর গ্লানি নিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে কখন যেন ঘুমিয়ে গেছে রিতুর নিস্তেজ শরীরটা! আর এই বাহিরে লাইট না জ্বালিয়ে ঘূমানোই সেদিন হয়েছিল রিতুর জীবনের কালো অধ্যায়। স্বামী বাড়িতে এসে বাহিরে লাইট না জ্বালানো দেখে রিতুর ঘুম থেকে উঠিয়ে জবাব চাওয়ার এক পর্যায় তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারবে বলেই গ্যাস লাইট দিয়ে রিতুর গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

স্বামীর প্রতি অঘাত বিশ্বাস থাকায় রিতু কল্পনাও করতে পারেনি তার সাথে এমনটি করতে পারবে স্বামী জিল্লু। যে কারণে পরিস্থিতি বুঝেও নিজেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করেনি রিতু। যখন গায়ে আগুন লেগে রিতুর নিস্তেজ শরীরটা পুড়তে শুরু করেছে। স্বামী তখন সিনেমার ভিলেনকেও হার মানিয়ে নিজের দোষ এড়াতে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে এসে রিতু গায়ে আগুন ধরিয়ে নিয়েছে বলে চিৎকার দেয়। ততক্ষণে রিতুর শরীরের ৫০% পুড়ে গেছে।

পাশেই বাবার বাড়ি থাকায় রিতুর চিৎকারে বাবা দৌড়ে এসে মেয়েকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া হয়ে ঢাকা বার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। রিতুর দরিদ্র বাবার সহায় সম্বল বিক্রি করেও টাকায় পেরে না উঠে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে মেয়ের চিকিৎসা দিলেও চিকিৎসার খরচ তো দুরের কথা, এরমধ্যে একটি বারও খোঁজ নেননি স্বামী জিল্লু ও তার পরিবার। এভাবেই ক্রন্দনরত ভাবে রিতু, রিতুর মা ও তার বাবা সংবাদ কর্মীদের জানান। গত বছর দুয়েক আগে ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ছোট ধলহরা গ্রামে। রিতু ঐ গ্রামের মোঃ আবিদ সেখের মেয়ে এবং রিতুর স্বামী একই গ্রামের রিতুর আপন ফুপু মালেকার ছেলে। অর্থাৎ রিতু ও জিল্লু তারা দুজনে আপন মামাত ফুফাতো ভাই বোন।

রিতুর বাবা বলেন, কতটা নিষ্ঠুর হলে আপন ভায়ের মেয়েকে নিজের ছেলের বউ বানিয়ে তার সাথে এমন নির্মমতা দেখাতে পারে!

ঘটনার দিন রিতু নিজেই তার গায়ে আগুন দিয়েছিল নাকি স্বামী জিল্লু তাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল, তা জানতে জিল্লুর বাড়িতে গেলেও জিল্লুর সাথে দেখা করতে দেয়নি তার মা। এমনকি মোবাইল নাম্বার চাইলেও তা দেয়া হয়নি সংবাদ কর্মীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই জিল্লু এর আগেও চারটি বিয়ে করেছেন। শাশুড়ির অত্যাচার আর মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতনে একজনও সংসার করতে পারেনি।

এদিকে রিতুর ভ্যান চালক বাবা তার মেয়ের সাথে করা এই নির্মমতার বিচার পেতে দারে দারে ঘুরলেও তিনি বিএনপির সমর্থক হওয়ায় কোথাও তাকে পাত্তা দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করে বলেন। তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী দোষোর লিটন মেম্বারের সাথে রিতুর শাশুড়ির ভালো সম্পর্ক থাকায় কোট কাচারিতে যেয়েও কোন লাভ হয়নি আমাদের। উল্টো রিতু নিজেই গায়ে আগুন লাগিয়ে নিয়েছে বলে পুলিশি প্রতিবেদনে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এভাবেই দিনের পর দিন মানুষিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে বলে জানান রিতুর বাবা। কারণ তারা বিএনপি করেন, তাই তাদের বিচার পাবার নাকি কোন অধিকার নেই।

রিতুর শাশুড়ি মালেকা খাতুন জানান, রিতু নিজেই নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে নিয়ে আমাদের ফাঁসাতে চেয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করেও তাই পেয়েছে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত লিটন মেম্বার একটি হত্যা মামলায় জেলহাজতে থাকায় এবং ধলহরা ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top