হরিণাকুণ্ডুতে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল: রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ) থেকে-

কোনও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে প্রশাসনের নাকের ডগায় যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও এল পি জি গ্যাসের দোকান।পাশাপাশি অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রয় করায় রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফরক অধিদফতরসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই এরা অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি করছে অকটেন-প্রেট্রোলসহ নানা তরল জাতীয় পদার্থ। রাস্তার পাশে সারি সারি সাজানো বতলের বাহ্-হারি রং দেখলেই মনে হবে সরকারি অনুমোদন নিয়েই পরিকল্পিত ব্যবসায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। উপজেলার সড়কের পাশে একাধীক স্থানে রয়েছে এইসব দোকান। আসলেই যা ভাবা হচ্ছে তা কিন্তু নয়। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ফায়ার সার্ভিসের বিনা অনুমোদন ছাড়া ঝুকিপূর্ণভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রেট্রোল, অকটেন, ডিজেলসহ তরল জাতীয় বিভিন্ন প্রকারের তৈলাক্ত পদার্থ। খোলা বাজারে অনুমোদনহীন দোকান থেকে অকটেন ও প্রেট্রোল কিনে যে কোনো সময় দূর্বৃত্তরা ঘটাতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। এতে যে কোনো সময় ভয়াবহ দূর্ঘটনার আশঙ্কা করেছেন সচেতন মহল ও স্থানীয় পথচারীরা।

জানা গেছে জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধা-পাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপক সক্ষমতা সংক্রান্ত লাইসেন্সসহ অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে অকটেন ও প্রেট্রোল বোতলজাত করে সারিবদ্ধভাবে রেখে অবাধে বিক্রি করছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী।

সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও
,কোথাও ট্রেড লাইসেন্স আবার কোথাও শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই তারা প্রতিনিয়ত রমরমা ভাবে বিক্রি করছে এইসব পদার্থ। এইসব দোকানে নেই কোনও আগুন নির্বাপক যন্ত্র, আবার থাকলেও সেটা রাখা হয় অন্য যায়গায়। যে কোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও জানা নেই এইসব ব্যবসায়ীদের।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার এমনকি গ্রামের মুদিও চায়ের দোকানে ও বিক্রি হচ্ছে এসব দাহ্য পদার্থ। উপজেলার কুলবাড়িয়া বাজার, সাতব্রিজ,ভবানীপুর,ভবানীপুর বটতলা,রামনগর, নারায়ণকান্দি, গুফিনাথপুর, দখলপুর, রিশখালী, সোনাতনপুর,শিতলী,ভালকী,পায়রাডাঙা,শাখারীদহ, চাঁদপুর,রঘুনাথপুর,চরপাড়া,জোড়াদহ, ভায়না,
পাখিমা’রা,ফলসী,একতারামোড়,লোহাপট্টি,শরিফা বোতাম ঘর কসাই মোড়,আমেরচারা,পার্বতীপুর, হলবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ও দোকানে বাইরে থেকে ড্রামে করে তেল এনে প্রকাশ্য এসব বিক্রি করছে কিছু ব্যবসায়ীরা। উপজেলার সড়কের পাশে এমনকি প্রশাসনের নাকের ডোগায় শতাধিক স্থানে রয়েছে এসব দোকান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকিছু প্রেট্রোল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, তাদের ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ও অনুমোদন নেই।

উপজেলার লোহা পট্রিতে মবিল ও পেট্রোল ব্যবসায়ী আলিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান,আমি ১৯৭৪ সালে অনুমোদন নিয়ে পেট্রোল ব্যবসা করে আসছি। আমার অনুমতি পত্র হরিণাকুণ্ডু থানায় দেওয়া আছে কিন্তু আমার কাছে নেই।

আইনের উর্ধ্বে কেঊ নাই।এই সব আইন বিরোধী কাজ। আমি বেশ কয়েকবার আইন শৃংখলা মিটিংয়ে বলেছি ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য, আমি আশাকরি খুব দ্রুতই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে জানান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিলু।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পথচারী ও স্থানীয়রা বলেন,হাতের নাগালে প্রেট্রোল বিক্রি করালে দূর্বৃত্তরা খুব সহজে বিভিন্ন নাশকতার কাজে প্রেট্রোল ব্যবহার করতে পারবে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর,ঝিনাইদহ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত) গণমাধ্যমকে জানান,প্লাস্টিক পানির বোতলে পেট্রোল বিক্রয় করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে সেটা নিঃশ্চয় অপরাধ করছে। তাছাড়া গ্যাস সিলিণ্ডার ১০ টির উপরে বিক্রয় করলে সেটা আইন বিরোধী।খুব শিগ্রহী এসব অবৈধ্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা সাংবাদিকদের জানান,বতর্মান বাজারে যারা এই সব ব্যবসা করে আসছে খুব শিগ্রহী উপজেলা প্রশাসন থেকে বাজার মনিটরিং করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top