হরিনাকুণ্ডুতে বেপরোয়া সুদে ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

হরিনাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ) থেকে-

মাসিক সুদ ৫০০০ হাজার টাকায় ৩০০ টাকা ! এই হারেই সুদ আদায় করছেন অবৈধ সুদ কারবারি।সুদের টাকা গ্রহীতা দিতে ব্যর্থ হলেই শুরু হয় নানা অত্যাচার কোথাও কুপ্রস্তাব, কোথাও মামলা-মোকোদ্দামা। এমনই এক চিত্র দেখা গেছে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের মণ্ডলতোলা গ্রামে। গ্রামটির আনাচে কানাচে সুদে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মৃত্যু ওয়াজ মণ্ডলের ছেলে মোঃ শফি উদ্দীন। সুদখোরের উৎপাতে বাড়ির গরু,ছাগল বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছেন জামেলা খাতুন নামের এক দিন মুজুরী গৃহিণী ।এখানেই শেষ নয় সুদখোর মোঃ শফি উদ্দীনের অত্যাচার স্বজ্জ করতে না পেরে হঠাৎ আকর্ষিকভাবে মৃত্যু হয় জামেলা খাতুনের স্বামী একমাত্র উপার্জনকারী ব্যাক্তি মোঃ রশিদ।

জানাগেছে সুদখোর শফি উদ্দীন দ্বীর্ঘ্য দিন ধরে এই সুদের ব্যবসা করে আসছেন। ইতোপূর্বে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশিত হলেও থামেনি সুদখোর শফি উদ্দীনের সুদের ব্যবসা। নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা জন
প্রতিনিধিরাও।

গ্রামের আপামর জনসাধারণ বলছে,তোলা, মণ্ডলতোলা, মাঠআন্দুলিয়া সহ বিভিন্ন এলাকাতে তিনি এই সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনও ধরা বাঁধার নিয়ম নেই। এইতো সেদিন আমাদের গ্রামের রশিদ নামের এক ছেলে মারা গেলো।শুনছি রশিদের বউয়ের নাকি ৫ হাজার টাকা দাদন দিয়ে সেখান থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েও শোধ হয়নি। তাকে আবার ৪ থেকে ৫ লাক্ষ টাকার কেচ করেছে মাদারীপুর জেলায়। যেহেতু এই শফি উদ্দীনের শ্বশুর বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। এই সুদখোর প্রায় মানুষেরই কাছ থেকে স্টাম্পে স্বাক্ষর করে নিয়ে সুদের টাকা পরিশোধ হলে সেই স্টাম্প দিয়ে অনেক টাকা লিখে মামলা দেয় বলেও জানান গ্রামবাসী। এই সুদের কারবারির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হরিণাকুণ্ডু প্রশাসনের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনাও করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

কথিত আছে উপজেলার ইসলাম,পিতা মসলেম সর্দ্দার, নিজাম উদ্দীন পিতা জহির সর্দ্দার, রেজাউল ইসলাম পিতা জহির সর্দ্দার, সুমি খাতুন স্বামী নিজাম সর্দ্দার, তাসলিমা খাতুন স্বামী রেজাউল সর্দ্দার উভয় সাং মণ্ডলতোলা গ্রামে। এদেরকেও একইভাবে ১০(দশ) ১২(বার) লক্ষ টাকার কেচ দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় মৃত্যু রশিদের স্ত্রী জামেলা খাতুন জাতীয় দৈনিক
দেশের কন্ঠ প্রতিনিধিকে জানান, আমার পারিবারিক প্রয়োজনে ২০১৯ সালে ৫ হাজার টাকা শফি উদ্দীনের কাছ থেকে নিই। যাহা মাসে আমাকে ৩০০/- শত টাকা দিতে হয়। এরপর ২ বছরের জন্য সরকারী চাউলের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে আমার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নেন। ঠিক ঐ সময়ে আমার কাছ থেকে রেজিষ্ট্রি স্টাম্পে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি জানতে চাইলে সুদখোর শফি বলে কোনও সমস্যা নেই, চাউলের কার্ডের জন্য এটা লাগবে। ছয় মাস পরেই আমি তার দেওয়া ৫ হাজার টাকার, ৯ হাজার টাকার সুদ সহ দিতে গেলে তিনি ৬০ হাজার টাকার চেয়ে দ্বাবী করে বসে। এঘটনায় আমার স্বামী ও দেবর ভাসুরদের জানালে তারা সুদখোরের সাথে আলাপ আলোচনা করে আমাকে ৪২ হাজার টাকা দিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। আমি গরু ছাগল বিক্রয় করে সেই টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে স্টাম্প আনতে তার বাডিতে গেলে সে আমাকে কুপ্রস্তাব। আমি ঐ সুদখোর শফির কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে সে আমাকে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে, এবং বলে তোর স্বাক্ষর করা স্টাম্পে ৪ (চার লক্ষ) টাকা বসানো আছে। আমাকে হুমকী দেয় জান মামুদের ছেলে জহির বিশ্বাসের মতো তোকেও মাদারীপুর কোর্টে মামলা করবো। আমি এই সুদখোরের সুষ্ঠ্যু বিচার চাই বলেও জানান সদ্য স্বামী হারা এই গৃহিণী জামেলা খাতুন।

উপজেলার মণ্ডলতোলা গ্রামের শফি উদ্দীনের স্ত্রী লেলিনা খাতুন জানান,সে আগে সুদের ব্যবসা করতো কিন্তু এখন আর এসব করে না। সুদের ব্যাবসা ও কুপ্রস্তাব বিষয়ে সুদখোরে শফি উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এড়িয়ে যাওয়ার ভান করে বলেন এসব মিথ্যা কথা।

এদিকে উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বসির উদ্দীন মণ্ডলতোলা গ্রামের রশিদের মৃত্যুর ঘটনার কথা স্বীকার করে জানান,লোকটা খুব ভালো মানুষ ছিলো। সুদখোর শফি উদ্দীন নাকি জামেলা খাতুনের সাথে সুদের কারবার করেছিলো। এমনই এক ঘটনায় ইতিপূর্বে নানা ধরনের মামলা মোকোদ্দামা হয় সেটা জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধে মামলাটা তুলে নেয়। এখন আবার সেমনই এক ঘটনা জামেলা খাতুনের সাথে শুনা যাচ্ছে। এমনকি এই ঘটনায় হরিণাকুণ্ডু থানাতে একটি অভিযোগও হয়েছে।

হরিণাকুণ্ড থানা পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোঃ আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, এব্যাপারে আমাদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জামেলা খাতুন ও শফি উদ্দীনের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্কের মতো সম্পর্ক ছিলো। তবে এদের মধ্যে মামলার সুত্র ধরে রেশারেশীর ঘটনা মনে হয়েছে। তিনি আরও জানান,২১ অক্টোবর ২০২০ ইং তারিখে চরঠ্যাংগা থানার মাদারীপুর কোর্টে ৪০৬,৪২০ ধারায় একটি প্রতারণার মামলা করে ঐ থানার করম আলীর ছেলে ঈদ্রিস তালুকদার। পরবর্তীতে ১৯ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে হরিণাকুণ্ডু থানার ইসলাম উদ্দীন, পিতা মফিজ উদ্দীন ৭/১৭ ধারায় একটি মামলা করেন ঈদ্রীস, শফি উদ্দীন ও মাহাবুবের নামে এবং ধারনা করা যাচ্ছে যে,ওদের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার একটি পরিকল্পনা হয়। পরে এদের মধ্যে মতোনৈক্যের ঘটনা ঘটে এবং হুমকী ধামকীর সুত্রপাত ঘটে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top