হরিনাকুন্ডুতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে গৃহবধূ লাঞ্চিত! থানায় মামলা 

হরিণাকুণ্ডু(ঝিনাইদহ) থেকে রাব্বুল হুসাইন

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে চম্পা খাতুন (৩০) (ছদ্মনাম) নামের এক গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১০ডিসেম্বর আনুমানিক রাত ২ টার দিকে উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের পাখি মারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীর স্বামী বাদি হয়ে গত ২১ ডিসেম্বর হরিণাকুণ্ডু থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করেন থানা পুলিশ।

ভিকটিমের স্বামী জানান, গেলো বছরের ১০ ডিসেম্বর পাখি মারা গ্রামে আমার স্ত্রীর বাবার বাড়িতে থাকা অবস্থায় অসুস্থতাজনিত কারণে আমার স্ত্রী গভির রাতে প্রকৃতির ডাকে বাথরুমে যায়। সেসময় আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা আবু সামাদ ও তার দলবল বাথরুমের পাশ থেকে ঝাপটে ধরে এবং অতর্কিতভাবে তাকে মুখ বেঁধে, মাথার চুল চেপে ধরে টানাটানি করে এবং তাদের হাতে থাকা লেপ সেলাই করা সুঁই ও ইনজেকশন দেওয়া সিরিজের সুঁই ফুটিয়ে, অস্ত্রের মূখে তাকে জিম্মি করে। এসময় আমার স্ত্রীর কাছে আমাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে লাঞ্চিত জনিত শারীরিক নির্যাতন করেন।

এছাড়াও এই ঘটনা নিয়ে কোন ধরনের বাড়াবাড়ি করলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যান তারা। ঘটনার পর প্রথমে লজ্জা ও ভয়ে আমার কাছে কিছু বলতে ইতোস্থবোধ করলেও যন্ত্রণা সইতে না পেরে পরের দিন সকালে আমাকে জানালে আমি তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের নিকট নিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ জানান, ঐ সময় আমার শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না। আনুমানিক রাত ২ টার দিকে প্রকৃতির ডাকে বাথরুমে গেলে, আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা দুঃস্কৃতকারী আবু সামাদ ও তার লোকজন, কিছু বুজে উঠার আগেই আমাকে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। আমাকে পাড়িয়ে দলিয়ে মারে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে সুইঁ ফুটিয়ে ও দেশি অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক যখম করে এবং হত্যার চেষ্টা চালায়। আমি চিৎকার করতে গেলে আমার মুখের মধ্যে গামছা গুঁজে দেয় এবং বলে এই ঘটনা লোকের কাছে জানালে তোর স্বামী সহ বাড়ির সবাইকে খুন করে ফেলবো। আমি তখন কোন রকম ভাবে বাড়িতে উঠে আসি। ভয়ে আমার স্বামীর কাছে বিষয়টা রাতে বলি নাই। সকালের দিকে শরীরের ভিতর খুব যন্ত্রণা হলে আমার স্বামীর কাছে জানালে গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে একটা সূইঁ বের করা হয় এবং মাজার ভিতরে ঢোকানো একটি সুইঁ ঝিনাইদহের সদর হাসপাতালে অপারেশন করে বের করা হয়। আমি একজনকে চিনতে পেরেছি, তার নাম আবু সামাদ। কি কারণে আমার উপরে এমন হামলার ঘটনা ঘটালো তা আমি কিছুই জানি না। আমি এর বিচার চাই।

এঘটনায় অভিযুক্ত আবু সামাদের সাথে যোগাযোগ করে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী মিতালী খাতুন জানান, আমার স্বামী ঐ রাতে কোথাও যায়নি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।তৌহিদুল-রা মানুষকে খালি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে এবং তাদের কাছ থেকে পরবর্তীতে টাকা নেয়। এমন প্রশ্নের উত্তরে মোঃ তাহাজ উদ্দীনের পুত্র তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কোন ব্যক্তি এরকম ঘটনার সম্মুখীন না হলে তার স্ত্রীর সাথে করা এমন অভিযোগ তুলে মিথ্যা মামলা করতে পারবে? এতে কি তার সম্মান নষ্ট হয়না ? তিনি বলেন, সত্য- মিথ্যা তদন্ত করে আমি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

তবে এঘটনার বিষয়ে অভিযুক্তর স্ত্রী অস্বীকার করলেও এলাকায় নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি সহ নানা ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে আবু সামাদ জড়িত আছেন বলে কথিত অভিযোগ রয়েছে।

ইউপি সদস্য আশিরুল ইসলাম জানান, আমার জানা মতে আবু সামাদ লেবারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে ঐ গৃহবধু যখন আমাকে বলেন, তখন সামাদের নাম বলিনি। পরবর্তীতে আইনের দিক থেকে শুনলাম তার নাম। আমি ধান কিনতে ওদের বাড়িতে গেলে আমাকে মার ধরের ঘটনার কথা জানান পরিবারের লোকজন। তবে যেই করুক ঘটনাটি জঘন্যতম।

হরিণাকুণ্ডুর জোড়াদহ পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্প ইনচার্জ রবিউল ইসলাম জানান, এক জনকে আসামী করে একটি মামলা হয়েছে তবে এখনো পর্যন্ত আসামী গ্রেফতার হয়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top