হরিনাকুন্ডুতে বালু উত্তোলন কান্ডে প্রশাসন হঠাৎ নিরব কেন?

হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ) থেকে রাব্বুল হুসাইন

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়ণকান্দি গ্রামের বেলে মাঠে ফসলি জমি নষ্ট করে দিনের পর দিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুকুর খনন করার নামে চলছে বালু উত্তোলন। চোর পুলিশের খেলায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ফসলি জমি ধ্বংস করছে আরেকটি চক্র। নামে-বেনামে রাজনৈতিক পরিচয়ে অবাধে বালু উত্তোলন ও মাটি কেটে কৃষি জমি উজাড় করলেও এদের বিরুদ্ধে বরাবরই কিছুটা নিরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। তবে নিরব ভূমিকা পালন করার বিষয়টি একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

উপজেলার পৌরসভাধীন চটকাবাড়ীয়া গ্রামের বালু ব্যবসায়ী লাল উপজেলার নারায়নকান্দী বেলে মাঠের ফসলী জমি থেকে অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে এক্সকেভেটর(ভেকু) ও ইঞ্জিন চালিত লাটা হাম্বা দিয়ে অবৈধ বালু অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে পরিবহন করার কারণে নিচে ধসে পড়েছে শ্রীপুর ও নারায়নকান্দী বেলে মাঠ সংলগ্ন বিভিন্ন ব্রিজ। বালু উত্তোলন দ্রুত বন্ধ না হলে ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

তৎকালীন এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে নারায়ণকান্দি গ্রামের মাঠে এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গত ৪ ডিসেম্বর ২০২০ সালে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরোজ কুমার নাথ। বালু উত্তোলনের সময় তিনটি ড্রেজার জব্দ ও বালু উত্তোলনের সামগ্রী পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও তিনি জানান। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত সোমবার (২৩ মার্চ) ২০২০ ইং সালে বালু উত্তোলনের সেই গভীর গর্তের পাশদিয়ে হাটতে গিয়ে নারায়নকান্দি গ্রামের এক বৃদ্ধ আনছার আলী (৭০) পানিতে পড়ে মৃত্যু বরণ করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,প্রায় মাঠ জুড়ে ফসলী জমি এলোমেলো ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কেটে গভীর গর্তকরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।সেখানে দেখা গেছে,উপজেলার নারায়ণকান্দি গ্রামে বেলে মাঠে ফসলি জমি নষ্ট করে আবারও বেশ কিছু দিন ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।যেসব জমিতে আগে ধান,পানবরজ
,গম,ভুট্টা,সীম,বাশঁ বাগানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হতো যা এখনো তার কিছুটা নমুনা আছে। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে আগামী ৫ থেকে ৬ বছরে আশপাশের যে পান বরজ এবং ধানক্ষেত আছে তা বালুর গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। এমনকি বসত বাড়িও ধসে পড়তে পারে।ইতিপূর্বে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে এই বালু উত্তোলন বেশকিছু বন্ধ ছিল। তবে সুযোগ পেলেই এই বালু খেকো লাল বালু উত্তোলন করতে থাকে।এই গ্রামের ফসলী জমি হুমকীর মুখে পতিত হওয়ার পাশাপাশি এলাকার রাস্তাঘাট,ব্রিজ ও কালভাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এলাকার স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের রাস্তায় যাতায়াত ঝুকিপূর্ণ হওয়া ছাড়াও এলাকায় বসবাসরত জনগন রাস্তার ধুলাবালীতে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধি ও সব সময় চলাচলের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

উপজেলার কিছু প্রভাবশালী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক
ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এই অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রয়ের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।এই সিন্ডিগেটের হোতা অবৈধ বালু ব্যবসায়ী লাল কাউকে তোয়াক্কা না করেই মনের মতো ব্যবসা
দিন রাত চালিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি জানান,সাধারণ লোক এদের ভয়ে কথা বলতে পারে না কিন্তু প্রশাসন একটু চেষ্টা করলে ও শু-নজর দিয়ে তাকালে এটি বন্ধ করা সম্ভব বলে জানান।

এ ব্যাপারে বালু উত্তালনকারী চটকাবাড়িয়ার গ্রামের লাল জানান,আমি তো বালু তুলছি-নে। পুকুর কাটার অনুমোদন করে নিয়ে এসেছি। কিছু মাটি পরিবহন করে আমারই আর একটি যায়গায় ভরাট করছি।তিনি আরও জানান এই মাটি আমি কারোর কাছে বিক্রয় করছি না। প্রশাসনের নির্দেশ মেনেই আমি এটা উত্তোলন করছি। আমি ঝিনাইদাহ ডিসি অফিস হতে অনুমতি নিয়েই মাটি কাটছি।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা এঁর সাথে ১৬ মে বিকাল ৪ টা ৬ মিনিটে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোনও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top