ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে চক্ষু হাসপাতাল ও অন্ধ পূনর্বাসন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম, দুর্নীতি ও বেআইনি কাজের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাকে নিয়ে আলোচনা -সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বুধবার (১৪ আগষ্ট) সকালে এসব অভিযোগ তুলে ১১ দফা দাবিতে চক্ষু হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করে। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম কে নিয়ে আলোচনা- সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সকাল ৯ টা থেকে কর্মবিরতি দিয়ে হাসপাতালের গেটের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় হাসপাতাল কমিটির সভাপতি ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও সদ্য পদোন্নতি পাওয়া সহকারী পরিচালক মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে অবৈধ কর্মচারী নিয়োগ ও উন্নয়ন কাজের নামে কেনাকাটায় অনিয়মসহ বিভিন্ন কাজে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এসব অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে দুর্নীতিবাজ জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম ও মিলন হোসেনের দ্রুত অপসারণের দাবি জানান।
সুত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের বিগত একটি কমিটির মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে ভেঙে দিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। এরপর থেকে হাসপাতালে কর্মরত স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দীর্ঘ বছরের ইনক্রিমেন্ট প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যে যাদের পদোন্নতি প্রাপ্য তাদের পদোন্নতি না দিয়ে যে বা যাদের পদোন্নতির সুযোগ নেই তাদেরকে অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাটুকার পদলেহনকারী ব্যক্তিকে অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে পদোন্নতি প্রদান করে চক্ষু হাসপাতালে নিয়োগ বাণিজ্য ও দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চক্ষু হাসপাতালে ঔষধ ও উপকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতি করাসহ অবৈধভাবে টেন্ডার ছাড়াই উন্নয়ন কাজের নামে অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাট করা, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি কর্তৃক ২২ পদে সার্কুলার দিয়ে অবৈধভাবে ৩৮ জন অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করা, নন মেডিকেল ব্যক্তি দ্বারা চক্ষু হাসপাতাল পরিচালনা করা, অন্ধ কল্যাণ সমিতির পূর্ববর্তী কমিটিকে অবৈধভাবে বাতিল করে দূর্নীতিবাজ লোকদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি করা, অন্ধ কল্যাণ সমিতির বর্তমান অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির মিটিং এ উপস্থিত সদস্যদের সম্মানী প্রদান করে হাসপাতালের অর্থ তছরুপ করা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কে চক্ষু হাসপাতালে ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া, তুচ্ছ কারণে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের শোকজ ও বরখাস্ত করা, দীর্ঘ বছরের অফিস সময়সূচি পরিবর্তন করে অন্যায়ভাবে সকাল ৭টা থেকে বেলা ৩টা ও বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আউটডোর চালু করা, কোন রোগী না হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ইমার্জেন্সি চালু রাখা, সরকারি ছুটির দিন অর্থাৎ ঈদ ও পুজা পার্বনেও অফিস চালু রাখা এবং আর্থিক ভাবে দূর্বল প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও অটোমেশন ও সিসি টিভি স্থাপনের নামে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে দূর্নীতি ও নিম্নমানের কম্পিউটার সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সুত্র মতে জানা গেছে। তবে এসব অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে অনুসন্ধানে যানা যাবে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা মনে করছেন।
এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কর্মবিরতি পালন করায়, ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শত শত সেবা প্রত্যাশীদের। সেবার পরিবেশ না পেয়ে ফিরে যান তারা।