ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কিশোরীর জোড়া ধর্ষণ মামলার তদন্ত রিপোর্ট মিথ্যা দাবী করে বিজ্ঞ আদালতে নারাজি প্রদানের সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঝিনাইদহ সদর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে এ আবেদনটি করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী কাজী আনোয়ারুল ইসলাম শামীম।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, গত ৭মার্চ রাত ৮ টার দিকে জেলার শৈলকুপা উপজেলার ভগবান নগরে জনৈক জোৎস্নার বাড়ির ভাড়াটিয়ার ১২ বছরের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করে ভগবান নগরের রবি’র ছেলে শরিফ (৪০)। এঘটনা জানাজানির পর গত ৮ মার্চ ঐ ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে উপজেলার কুলচারা গ্রামের জনৈক তোজামের বাড়িতে বাসা স্থানান্তর করেন। সেখানেও ঠিক একই ভাবে গত ৮মার্চ রাত ৯টার দিকে ঐ কিশোরীকে ধর্ষণ করে ভগবান নগরের কৃষ্ণ’র ছেলে সন্ন্যাসী (৪২)। ধর্ষকরা ভাড়াটিয়ার স্ত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করায়, মা তার নিজের কিশোরী মেয়েকে ধর্ষকদের কাছে লেলিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও ঘটনাটি কেউ যাতে দেখে না ফেলে সেকারণে কিশোরীর মা ফরিদা পারভীন (২৭) বাহিরে থেকে পাহারা দিয়েছে বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। পরে ১২ মার্চ ঘটনাটি ঐ কিশোরী তার বাবার কাছে বললে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চরম ঝগড়াঝাঁটির এক পর্যায়ে ভাড়াটিয়ার স্ত্রী বাড়ি থেকে অজ্ঞাত কোথাও চলে যায়। পরে স্ত্রী আর ফিরে না আসলে, গত ১৫ মার্চ ভাড়াটিয়া তার স্ত্রীকে সহ ঘটনার সাথে অভিযুক্ত তিন জনকে আসামি করে শৈলকুপা থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
অভিযোগ আমলে নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে শৈলকুপা থানা মামলাটি রুজু করেন, এবং সাব- ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) তরিকুল ইসলামকে তদন্ত ভার দেওয়া হয়। যার মামলা নং ১৩ । দীর্ঘ ১ মাস তদন্ত শেষে ঘটনাটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং মেডিকেল রিপোর্ট “ইনটেক” দেখিয়ে চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত অফিসার তরিকুল ইসলাম।
মামলার বাদী ঐ ভাড়াটিয়া জানান, আসামি পক্ষের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অন্য খাতে ঘুরিয়ে প্রতিবেদন করেছেন তদন্ত অফিসার তরিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমি এই তদন্ত রিপোর্ট মানিনা। আমার মেয়ে কখনো মিথ্যা কথা বলে অন্তত তার মাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করতে পারে না। আমি মনে করি আমার নাবালিকা মেয়ের সাথে যা ঘটেছে এবং আমার মেয়ে আমার কাছে যা বলেছে তা পুরোপুরি সত্য। তাই বিজ্ঞ আদালতের কাছে ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্য নারাজির আবেদন করার জন্য আইনজীবীকে পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, মামলার তদন্তভার অন্য কোন তদন্তকারী সংস্থার কাছে দিলে আমি সঠিক বিচার পাবো বলে মনে করছি।
বিষয়টি জানতে মামলার তদন্ত অফিসার তরিকুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী কাজী আনোয়ারুল ইসলাম শামীম জানান, এ মামলার আইও প্রতিবেদনে সঠিক ভাবে তদন্ত না করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করেছেন এবং মিথ্যা মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন। যে কারণে বিজ্ঞ আদালতের নিকট নারাজি ও পুনর্তদন্তের আবেদন করার সময় প্রার্থনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এমামলার নিরপেক্ষ তদন্ত হলে বাদীপক্ষ সঠিক বিচার পাবে বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য- এ মামলার ২নং আসামী সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ১নং আসামি শরিফ ও ৩নং আসামি ফরিদা পারভীন পলাতক রয়েছে।