ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শতাধিক অসহায় পরিবারের সদস্যদের বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও চালের কার্ড করে দেওয়ার নামে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে গত রোববার সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে, ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, গত চেয়ারম্যান নির্বাচনে উপজেলার ৮নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন ধাওড়া গ্রামের ফটিকের মেয়ে মোছাঃ ঝড়ি বেগম। এরপর থেকে তিনি ধাওড়া গ্রামের বিভিন্ন অসহায় পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ভাতা কার্ড করে দেওয়ার নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে তিন চার হাজার করে টাকা নেয়। এছাড়াও মোটা দাগে ঐ গ্রামের কাঞ্চন ও কাজলী নামে দুই সতিনের বিধবা কার্ড করে দেওয়ার নামে একজনের কাছ থেকে ১৫ হাজার এবং অন্যজনের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। এতে সব মিলে প্রায় শতাধিক অসহায় পরিবারের কাছ থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করে তাদের ভাতা কার্ড না করে দিয়ে বিভিন্ন তাল বাহানা করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে বিগত পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের ছেলে দিনারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো এই ঝড়ি। যে কারণে কার্ড না পেয়ে ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতেন! গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর এসব ভুক্তভোগীরা একে একে মুখ খুলতে থাকে। বাবু নামে ঝড়ির এক প্রতিবেশী জানান, তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য বাড়ির পাশে একটি পোল্ট্রি মুরগির খামার করেন কিন্তু তিনি বিএনপি করেন বলে রাতের আঁধারে ঐ পোল্ট্রি মুরগির খাবারে বিষ মিশিয়ে প্রায় ১৮’শ মুরগি মেরে ফেলে। পরে পরিবারের চাহিদা মেটাতে তিনি ঢাকায় গিয়ে উবারে মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ধাওড়া বাজারের ক্যানালের পাশে বসবাসকারী ফুলি, আসমা, রিক্তা, জাহানারা, মৌসুমী, শিউলি, শিখা, আকবর আলি এবং হিন্দু পাড়ার পূর্ণিমা রানী মন্ডল, সুন্দরী মন্ডলসহ প্রায় শতাধিক নারীর অভিযোগ, তাদের কাউকে চালের কার্ড, কাউকে বয়স্ক ভাতা আবার কাউকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে তিন চার হাজার করে টাকা নিয়ে কার্ড করে দেয়নি। পরে টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। এদের প্রত্যেকেই প্রায় ভুমি হীন পরিবারের এবং দিন মুজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেন। তারা এই প্রতারণার দায়ে ঝড়ির বিচার এবং তাদের টাকা ফেরত চাই। এবিষয়ে অভিযুক্ত মোছাঃ ঝড়ি বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমস্ত দায় স্বীকার করে বলেন, তথ্য অফিসে চাকরি করে আমার ভাসুরের মেয়ে শিল্পী। তার পরামর্শ অনুযায়ীই আমি টাকা নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে শিল্পী অস্বীকার করে উল্টো আমার নামেই মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বসাবসি করে একটা মিমাংসা করা হয়েছে। আমি সবাইকে টাকা ফেরৎ দিয়ে দেবো।
ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আমির জোয়ারদার বলেন, স্বৈরাচার সরকার পতনের পর ঝড়ির বিরুদ্ধে এলাকার শতাধিক মানুষ এমন অভিযোগ করছে। আমরা চেষ্টা করছি ভুক্তভোগীদের টাকা গুলো ফেরত দেওয়ানোর জন্য।
এবিষয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া শিল্পীর নাম্বারে ফোন দিলে তার নাম্বার বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শৈলকুপা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার জানান, ঘটনার বিষয়ে আমার জানা নেই তবে এমন ঘটনা যদি কেউ করে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।