জমে উঠেছে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ নির্বাচনঃ হাড্ডা হাড্ডি লড়ছেন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী

ঝিনাইদহ থেকে-

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। চেয়ারম্যান পদে হাড্ডা-হাড্ডি লড়ছেন দু’জন প্রার্থী। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দলীয় মনোনীত প্রার্থী কনক কান্তি দাস এবং সদর পৌর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সহ-সভাপতি এম হারুন অর রশীদ।
নির্বাচনে পুরুষ সদস্য পদে ২২ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলার ৬টি উপজেলায় মোট ৯৫৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭২৯ এবং মহিলা ভোটার সদস্য ২২৫ জন। এ জেলায় ৬টি উপজেলা পরিষদ,সদর পৌরসভা বাদে ৫টি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরগণ এবং ৬৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা ভোটে অংশ নিতে পারবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস ছালেক। নির্বাচনী প্রচারনা নিয়ে দু’জন প্রার্থী কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রতিদিন । দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচারণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে বলা হয়েছে তার পক্ষে ভোটের মাঠে আছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুল হাই এমপি ও আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি,তাহজীব আলম সিদ্দিকী (সমি) এমপি,শফিকুল আজম খান চঞ্চল এমপি এবং মহিলা এমপি খালেদা খানম। অনেক সরকারী চাকুরী জীবিকেও নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল ভাঙচুর, সমর্থকদের উপর হামলা,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, মারধর, স্বর্নের চেইন ও নগদ টাকা ছিনতাইসহ ভয়ভীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী এম হারুন অর রশীদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন,আমার কর্মী সমর্থকদের উপর নানা ভাবে হুমকী দেয়া হচ্ছে, এমনকি মারধর করা হচ্ছে,অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ভোট চাইতে নানা ভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন এসব ঘটনার প্রমানসহ থানায় বেশ কয়েকটি জিডি এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনারসহ প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী কনক কান্তি দাস জানান, আমরা শতভাগ নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে ভোট প্রার্থনা করছি। আমাদের বিরুদ্ধে অনেকে মিথ্যা এবং বানোয়াট প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মনিরা বেগম জানান, আমরা যে সব অভিযোগ পেয়েছি সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান জানান, আমি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর সংসদ সদস্যদের ভোট চাওয়ার ব্যাপরটা দেখবেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এদিকে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে অনেকে প্রকাশ্যে চশমা মার্কার প্রার্থী কনক কান্তি দাস এর নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত আনারস মার্কার প্রার্থী হারুন উর রশিদের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। তারা জানান,সদ্য সমাপ্ত ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় নৌকা মার্কার প্রার্থী আব্দুল খালেকের শোচনীয় পরাজয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ নির্বাচন নিয়ে অনেক গল্প-কথা বাতাসে চাওর হয়ে আছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে সন্দেহ সংশয়ও দানা বেধে আছে। এখন কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এছাড়া জেলার ৬৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে মেম্বরদের সম্পর্ক ভালো নেই তারা নানা ভাবে চেয়ারম্যানদের দ্বারা লাঞ্চিত,বঞ্চিত। চেয়ারম্যানরা একক ক্ষমতায় পরিষদ চালান। আর এ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ভোটাররা ভাগাভাগি হয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হারুনের ভোটের পাল্লা ভারি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নির্বাচনী পর্ববেক্ষকদের মতে এ জেলায় নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধি সরকারী দলের বাইরে নির্বাচিত হয়েছেন তারাও স্বাভাবিক ভাবেই সরকার দলীয় প্রার্থীর বাইরে ভোট দিতে পারেন। তবে অনেক ভোটার বলেছেন কনক কান্তি দাস এক জন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী,তিনি কর্মী বান্ধব,বিগত সময়ে উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন তার নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংকও রয়েছে সেই হিসেবে তিনিও দারুনভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান হওয়ার পথে।
তবে সকল হিসাব-নিকাশের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top