ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় জাহিদুল (৩৬) নামে এক এপেন্ডিস রোগীর ভুল অপারেশন করায় দুই লক্ষাধিক টাকা ক্ষয়ক্ষতি গুনতে হয়েছে বলে ডা: পারভেজের নামে অভিযোগ তুলেছেন ঐ ভুক্তভোগী। এমনকি ডা: পারভেজের এই খামখেয়ালি ভুল চিকিৎসার কারণে জীবনটাও বিসর্জন দিতে হচ্ছিল জাহিদুলের। বুধবার (১৯ অক্টোবর) এমনই এক মর্মান্তিক অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের জানান, গত ১২ই আগস্ট জাহিদুল পেটে ব্যথা নিয়ে ডা: পারভেজের নিকট চিকিৎসা নিতে যায়। তিনি জাহিদুলকে কয়েকটি টেস্ট করিয়ে এপেন্ডিস হয়েছে বলে যানান। পরেরদিন ১২ই আগস্ট রোগীর এপেন্ডিস অপারেশন করেন ডাঃ পারভেজ। অপারেশন শেষে ডাঃ পারভেজ রোগীর স্বজনদের জানান, আর কোন সমস্যা নেই নাড়ি বেঁধে দিয়েছি।
জাহিদুল উপজেলার আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ইমদাদুল বিশ্বাসের ছেলে এবং ডা: পারভেজ শৈলকুপার কবিরপুরে অবস্থিত খুরশিদা মেমোরিয়াল ডাইগনষ্টিক এন্ড হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেন।
এদিকে ভুক্তভোগী জাহিদুল অভিযোগ করে বলেন, অপারেশন করার পরেও তার সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। হাসপাতাল থেকে ১৭ই আগস্ট রিলিজ হওয়ার পর ২০ আগস্ট সেলাই কাটতে যান তিনি। এর পরেও তার সমস্যার সমাধান না হওয়ার বিষয়ে দুই তিন দফা জানাতে গেলে, প্রতিবারই তিনি ঔষধ চেঞ্জ করে দিয়ে জানান, নিয়মিত ঔষধ খান ঠিক হয়ে যাবে। পরে রোগীর অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকলে, তাকে নতুন একটি টেস্ট দিয়ে পুনরায় অপারেশন করা লাগবে বলে জানান ডাঃ পারভেজ। তবে ডাঃ পারভেজের খামখেয়ালী চিকিৎসার পিছে দৌড়ে বার বার ভুল করতে চাননি ভুক্তভোগী পরিবার। ডাঃ পারভেজের উপর ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে স্বজনদের পরামর্শে সোজা ইসলামী প্রাইভেট হাসপাতাল নামে মাগুরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে একটি টেস্ট করতে দেওয়া হয়। টেস্টটি যশোর কুইন্স হাসপাতাল থেকে করে আনলে, ঐ টেস্ট দেখে দ্রুত অপারেশন না করলে রোগী মারা যেতে পারে বলে ধারণা করেন ডাঃ শফিউর রহমান। এমনটাই ধারণা রোগীর স্বজনদের।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, হয়তো যশোর কুইন্সের ঐ টেস্টের রিপোর্টে ডাঃ পারভেজের ভুল অপারেশন ধরা পড়ে। যে কারণে ডাঃ শফিউর রহমান অপারেশন করার আগে ডাঃ পারভেজকে ফোন করে মাগুরার ইসলামী প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে বলেন এবং অপারেশনের কাছে থাকতে বলেন। ডাঃ পারভেজ যেতে অসঙ্গতি প্রকাশ করলে ডাঃ শফিউর রহমানের সাথে মোবাইলে কিছু সময় বাক বিতণ্ডাও হয় বলে রোগীর স্বজনরা জানান। সেই বাক বিতণ্ডা শুনে ডাঃ পারভেজ যে ভুল অপারেশন করেছে তা বুঝতে আর দেরি হয়নি রোগীর স্বজনদের। তারা বলেন, এপেন্ডিস অপারেশন না করে নাড়ী বেঁধে সেলাই করে দিয়েছিল ডাঃ পারভেজ।
ডাঃ পারভেজের যে ভুলের কারণে রোগীকে বাঁচাতে বিভিন্ন যায়গায় দৌড়াদৌড়ি, চেকাপ, ঔষধ এবং অপারেশন ফি সব মিলে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা তাদের খরচ হয়ে গেছে বলে জানান জাহিদুলের স্বজনরা। তারা বলেন, প্রথমেই যদি অপারেশন সঠিক হতো তাতে সব মিলে ১০/১৫ হাজার টাকা তাদের খরচ হতো। ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, অতিরিক্ত এই খরচের দায়ভার এখন কে নেবে?
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডা: পারভেজের মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে তিনি প্রথমেই সাংবাদিকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজির অশালীন মন্তব্য করেন। পরে রোগীর অপারেশনের বিষয়ে তিনি সঠিক নিয়মেই করেছেন বলে দাবি করেন।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা: সুভ্রা রানী জানান, রোগীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।