তিনি কখনও প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্নীয়, আবার কখনও নিজেকে মৎস্য কর্মকর্তার পরিচয় দিতেন: অতঃপর লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-

কখনও প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আত্নীয় কখনও বা মৎস কর্মকর্তা। এভাবে খুব সহজেই ঝিনাইদহের সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার ফাঁদ পেতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন শিহাবুজ্জামান সোহাগ (২৭) নামে এক প্রতারক। ভুক্তভোগীরা এমনটাই অভিযোগ তুলে সংবাদ কর্মীদের জানান, গত তিন চার মাসের মধ্যে সোহাগ নামের ছেলেটি সাতক্ষীরা জেলা থেকে এসে বেশকিছু অসহায় মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের জীবন চলার পথকে সর্বশান্ত করে দিয়ে গেছে। জানা গেছে অভিযুক্ত সিহাব সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নাঙলদাড়ীয়া গ্রামের মুসা মল্লিকের ছেলে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায় যে, গত চার পাঁচ বছর আগে সাতক্ষীরার আশাশুনি পৌর এলাকার (বড়বাড়ী) মোস্তফা মোড়লের মেয়ে মরিয়মকে পরিবারের অজান্তে বিয়ে করেন সোহাগ। গত চার পাঁচ মাস আগে নিজেকে বেকারত্বের হাত থেকে রক্ষা করতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বড় ভাইরা সোজাউদ্দিনের কাছে ঝিনাইদহে আসে। সোজাউদ্দিন জীবীকার তাগিদে তিন চার বছর আগে সাতক্ষীরা থেকে ঝিনাইদহ শহরে বাসা ভাড়া করে থেকে বিভিন্ন স্থানে মাটিকাটার কাজ করেন। পরে জুয়েল নামে তার আপন শেলককে নিয়ে এসে শহরের কচাতলার মোড়ে সিঙ্গাড়া, আলুর চপ, ছোলাসহ বিভিন্ন ধরণের ভাজা পোড়ার দোকান করে দেন। গত তিন চার মাস আগে বড় ভাইরা সোজাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত শিহাবুজ্জামান সোহাগ স্ত্রী সন্তান নিয়ে আসে। সোহাগ বেকার থাকায় ঝিনাইদহ শহরে পরের বাসায় কাজ করে সংসার চালায় স্ত্রী মরিয়ম। একসময় ফ্যামেলী জোন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে যেয়ে স্বামী সোহাগের জন্য একটি চাকরির আবেদন করলে সেখানে ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি হয় সোহাগের। ফ্যামেলী জোনে চাকরি করতে করতে শহরের বিভিন্ন লোকের সাথে সক্ষতা তৈরি করে বিশ্বস্ত অর্জন করে সোহাগ।
এরপর থেকে কখনও প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার আত্নীয়, আবার কখনও নিজেকে মৎস্য কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকের সাথে শুরু করে প্রতারণার ফাঁদ। সোহাগের এই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সর্বশান্ত হয়ে শহরের নতুন হাট খোলা বাজারে মাছের আড়তে কাজ করা তরিক নামে একজন জানান, প্রায় সময় তার কাছে এসে মৎস্য কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে মাছের আড়তে বসতো সোহাগ। এক পর্যায়ে মাছের খাবার দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ২৮ হাজার টাকা নেয়। এর কিছুদিন পর থেকে সোহাগকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ঝিনাইদহের এক গৃহবধূ জানান, চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। তিনি বলেন, এক প্রকার খ্যাতা কম্বল বিক্রি করে এই টাকা তিনি জোগাড় করে দিয়েছিলেন। তিনি এখন টাকার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ে বাবার বাড়ি যশোরে আছেন। গত ১৬ই জানুয়ারী এই সোহাগকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বীর জনতা পত্রিকার বরাত দিয়ে শিরোনামে দেখা যায় “টাকা না পেয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে এলো ট্রাফিক পুলিশ”। পত্রিকাটিতে ১০ হাজার টাকার প্রশ্ন তুললেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঐ ট্রাফিক পুলিশকে মোটর সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা নেয় সোহাগ। পরে সোহাগের সাথে আর যোগাযোগ না করতে পেরে হতাশ হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে ট্রাফিক পুলিশ। একপর্যায় ট্রাফিক পুলিশ শহরের কচাতলা মোড়ে সোহাগের স্ত্রীর বড় ভাই জুয়েলের খোঁজ পায়। জুয়েলের কাছে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললে, জুয়েল ট্রাফিক পুলিশ কে জানায়, তার বাসায় সোহাগের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল রেখে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে সাতক্ষীরায় গেছে। জুয়েল জানান, ঐ ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলে সোহাগ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে আমি একথা শুনে এবং জুয়েলের বাসায় মোটরসাইকেল রাখা নিরাপদ নয় বলে আমি নিজেই ঐ ট্রাফিক পুলিশ কে মোটর সাইকেলটি নিয়ে যেতে বলেছিলাম। যে কারণে ট্রাফিক পুলিশ মোটরসাইকেলটি তার হেফাজতে নিয়ে এসেছিলেন। একথা জানতে পেরে নিজের কৃতকর্মের দায় এড়াতে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব বরাবর অভিযোগ দিয়ে তার বিরুদ্ধে সোহাগ মিথ্যা নিউজ করিয়েছিলেন বলে ঐ ট্রাফিক পুলিশের দাবি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহের সাবেক সদর সার্কেলের এএসপি আবুল বাশারকে খালাতো/ফুফাতো ভাই পরিচয় দিয়ে ঐ ট্রাফিক পুলিশের সাথে সক্ষতা গড়ে তুলেছিল প্রতারক সোহাগ। এছাড়াও জানা গেছে, সাবেক বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ তার আত্নীয় বলে কোন কোন জায়গায় পরিচয় দিতেন সোহাগ।
তবে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আত্নীয় পরিচয় দিলেও পুলিশের কোন সদস্য পদেই তাদের আত্নীয় নেই বলে সোহাগের বাবা মুসা মাষ্টার জানান। এদিকে ভুক্তভোগী কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম কয়েক দিন সোহাগের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে তারা যোগাযোগ করলে তার মা মারা গেছেন বলে তাদের কে জানিয়েছিলেন। যে কারণে সে ঝিনাইদহে আসতে পারছেনা বলে ভুক্তভোগীদের শান্তনা দেন। তবে মা মারা গেছে কিনা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যে, এখনও সুস্থ অবস্থায় তিনি জীবীত রয়েছেন। এধরণের নেক্কারজনক কথা বলাই প্রতারক সোহাগের বিরুদ্ধে আরোও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন এসমস্ত ভুক্তভোগীরা। প্রতারক সোহাগের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জানান, বিভিন্ন আন-নন নাম্বার দিয়ে ফোন দিয়ে তাদেরকে টাকা ফেরৎ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় এবং মামলা চালানোর সামর্থ্য না থাকায় তারা সেদিকে ঝুঁকতে চাইছেন না। তবে সোহাগের বিরুদ্ধে এ সমস্ত অভিযোগের সত্যতা জানতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে শিহাবুজ্জামান সোহাগের মোবাইল নাম্বার নিয়ে ফোন দিলে, ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top