ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর দেশবাসীর সামনে কথা বলতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন তিনি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির পর তিনি আর গণমাধ্যমে বা দেশবাসীর সামনে কথা বলতে পারেননি। আজ বুধবার (৭ আগস্ট) তিনি জনসম্মুখে অনলাইনে কথা বলবেন। তার এ বক্তব্য শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীসহ দেশবাসী। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা ছয় মাস স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর ছয় মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হবে। এরপর মঙ্গলবার নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এদিকে, দীর্ঘ সময় পর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এখন উৎসবের আমেজ। এতদিন যেসব সভা-সমাবেশ করেছে দলটি সেগুলোতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝেও জড়ো হতেন নেতাকর্মীরা। তবে আজকের চিত্র ভিন্ন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর সভাপতিত্ব করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সময় টিভি নিউজের বরাত দিয়ে জানা যায় যে, রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা আসছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন এবং বিজয় উল্লাস করেন। আর আজ কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই রাজধানীতে সমাবেশ করছে বিএনপি। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই তারা নয়াপল্টনে জড়ো হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত থেকে দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ মঞ্চ তৈরির কাজ করা হয়। আর আজ সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। সুত্রে দেখা যায়, বদলে গেছে দলটির কার্যালয়ে আশপাশের পরিবেশ। গত এক দশক ধরে দেখা যেত দলটির কার্যালয় ঘিরে চারপাশে থাকতো পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেই দৃশ্যটি আজ নেই। এদিকে, রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে সমাবেশস্থলের বিভিন্ন জায়গায়। শুধু তাই নয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত বেনার-ফেস্টুনও দেখা গেছে সেখানে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে মাইকও লাগানো হয়েছে রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাংক পর্যন্ত।
সমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, আগে সমাবেশে আসতে পথে-পথে বাধার সম্মুখীন হতেন তারা। অনেক সময় হামলার শিকারও হতেন। এছাড়া সমাবেশস্থল থেকে কিংবা আসা-যাওয়ার পথ থেকে গ্রেফতার করা হতো। আজ সেই ভয় নেই।
এদিকে, সমাবেশ মঞ্চের মাইক থেকে বলা হচ্ছে, আজ আমরা মুক্ত। বিজয় অর্জন করেছি। এখন অনেক সুযোগসন্ধানী দলে ভিড়তে চাইবে। আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইবে। এটা হতে দেয়া যাবে না।