নিজস্ব প্রতিবেদক ঝিনাইদহ-
নানান দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় ধ্বংসের দিকে ঝিনাইদহের এক সময়ের সুনাম ধন্য সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা। অভিযোগ রয়েছে এই মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসাবে রুহুল কুদ্দুস যোগ দেওয়ার পরে দুর্নীতি আর অনিয়মে ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়েছে মাদ্রাসাটি। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অডিটে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার অনিয়ম ধরা পড়লেও ম্যানেজিং কমিটির কাছে সেই তথ্য গোপন রেখে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস।
বর্তমানে এই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঝিনাইদহ-মাগুরা সংরক্ষিত আসনের সাংসদ খালেদা খানমের ছেলে সাব্বির আহমদ। সাব্বির আমহদ প্রায় ৩ বছর যাবৎ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে প্রায় দেড় বছর মহিলা এমপি খালেদা খানম নিজে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে মহিলা এমপির বড় মেয়ে সুহেলীকে মাদ্রাসার কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দিয়েছেন। জানাগেছে, মহিলা এমপির ছেলে সাব্বির আহমদ সভাপতি হলেও মহিলা এমপি নিজেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এমনকি ম্যানেজিং কমিটির সভা পর্যন্ত মহিলা এমপির বাড়িতে হয়। সেখানে মদদপুষ্ট দুয়েকজন সদস্য ছাড়া কেউ উপস্থিত থাকেন না পরে জোর করে অন্যান্য সদস্যদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ম্যানেজিং কমিটির বাকী সদস্যদের স্বাক্ষর করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। অভিযোগ রয়েছে মাদ্রাসা ফান্ড হতে শিক্ষকদের ৫% উৎসাহ ভাতা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে সভাপতি সাব্বির আহমদ। অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিজের খেয়াল খুশিমত অফিশিয়াল কাজ করায় ও নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিত না থাকায় ২০১৭ সালে কামিল শ্রেণির ফর্ম পূরণে বিলম্ব করায় ১৪ হাজার টাকা জরিমানা, ২০২০ সালের অনার্স ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষের ফর্ম পূরণে বিলম্ব করায় ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা দেয়া হয়েছে। সেই টাকা তিনি মাদ্রাসা ফান্ড থেকেই পরিশোধ করেছেন। মাদ্রাসার সামনে মার্কেট নির্মাণে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মহিলা এমপির আত্মীয়া মাদ্রাসার বিদ্যুৎসাহী সদস্য সাবিনা ইয়াসমিনকে আহব্বায়ক, মহিলা এমপির স্বামী কারু মিয়া ও তার আরও একজন আত্মীয়কে সদস্য করে কন্সট্রাকশন কমিটি বানিয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে দোকান বরাদ্দর নামে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্যদের না রেখেই তিনি জামানত বাবদ টাকা আদায়, খরচ বেশি দেখিয়ে ১৬ লাখ টাকায় নিজে দুটি দোকান বরাদ্দ নিয়ে সেই টাকা আবার উত্তোলনও করেছেন।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, মাদ্রাসার বড় বড় ৭টি কড়াই গাছ ও ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ ও আগের সভাপতি। এক যুগের বেশি কামিল বিভাগ খুললেও ক্লাস হয় না। মাদ্রাসায় ডোনেশনের টাকাও তছরুপ করেছেন অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবেদককে অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস বলেন, অডিট অনিয়মের বিষয়টি মিথ্যা। নিয়ম মেনেই কন্সট্রাকশন আহব্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। মহিলা এমপি দেড় বছর ও তার ছেলে প্রায় ৩ বছর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে শুধু একজনকে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার কোন গাছ কাটা হয়নি। কোন আর্থিক অনিয়ম করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে সভাপতি সাব্বির আহমদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মহিলা এমপি খালেদা খানম জানান, অধ্যক্ষের অডিট অনিয়মের কথা আমি জেনেছি। আমি মাদ্রাসার গাছ দিয়ে মাদ্রাসায় টেবিল চেয়ার বানানোর ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষকদের উৎসাহ ভাতা করোনার কারণে বন্ধ হয়েছিল আর চালু হয়নি। তবে প্রয়োজনে আবার চালু করা হবে। কন্সট্রাকশন কাজের জন্য গঠিত কমিটিতে বিদ্যুৎসাহী সদস্যকে আহব্বায়ক করে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথেই এই কাজ চলমান রয়েছে। মাদ্রাসায় যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তা বন্ধ করার জন্য তিনি জোর পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান।
এদিকে জানাগেছে, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেব কেবলা । এতদিন ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে এই মাদ্রাসাটি সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছিল। বর্তমানে অধ্যক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার হাত থেকে ও ম্যানেজিং কমিটির দুর্নীতির হাত থেকে ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসাটিকে রক্ষা করতে শিক্ষা বোর্ড, দুদুক, এবং ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসেনর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিনিয়র শিক্ষক জানান, নতুন করে অডিট করলেই নতুন নতুন অনিয়ম বেরিয়ে আসবে। অধ্যক্ষ মাদ্রাসাটিকে ধ্বংস করে ফেলেছেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন কামিল ক্লাস চালু করার। তারা মাদ্রাসার সকল অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছেন।