ঝিনাইদহে জীনের বাদশা খ্যাত প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৬

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহে জীনের বাদশা খ্যাত প্রতারক চক্রের মূল হোতা মাজেদুল ইসলাম অরফে মাজেদ (৩২) নামে এক প্রতারক কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৬। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ঝিনাইদহ পৌরসভার আরাপপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানিয়েছেন, প্রায় দুই বছর পূর্বে ভুক্তভোগী মোঃ নাসির উদ্দিনের সাথে প্রতারক মাজেদুল ইসলামের (জিনের বাদশা) পরিচয় হয়। এরপর থেকে ভুক্তভোগী নাসিরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে তার বাড়িতে যাতায়াত শুরু করে মাজেদ। একপর্যায়ে নাসিরের বাড়ির পুকুরে একটি পিতলের কলসির মধ্যে কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ আছে বলে ভুক্তভোগী নাসির কে জানায় এবং মাজেদের কাছে থাকা জিনের মাধ্যমে ঐ সম্পদ তুলে দেওয়ার প্রলোভন দেখায় এবং ঐ সম্পদ তুলতে ৭ লক্ষ টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগী নাসির প্রতারনার ফাঁদে পড়ে তার নিজ নামিও জমি বিক্রি করে এই টাকা জোগাড় করে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নাসির জানান, একদিন রাতে প্রতারক মাজেদুল তার সহযোগীদের নিয়ে অভিনব কৌশলে তার পুকুর থেকে একটি পিতলের কলসি তুলে তার স্ত্রীর হাতে দিয়ে দুধ দিয়ে ধুয়ে আনতে বলে এবং ৪১ দিনের মধ্যে এই কলসির মুখ খোলা যাবেনা বলে জানায়। এছাড়াও ৪১ দিনের আগে কলসির মুখ খুললে তাদের সন্তান মারা যাওয়াসহ বিভিন্ন ভয়ভীতিও দেখায় ঐ প্রতারক চক্র। এর ১৫ দিনের মধ্যে ৩ দফায় ভুক্তভোগী নাসিরের নিকট হতে ৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।

পরবর্তীতে ৪১ দিন পরে কলসির মুখ খুলে ভুক্তভোগী নাসির দেখতে পাই কলসির ভেতরে শুধু কালো পাথর। এতে ভুক্তভোগী প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতারকচক্রের সাথে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত চাইলে প্রতারক চক্র তাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে প্রতারক চক্র নাসিরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

বিষয়টি প্রকাশ হলে বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার হয় এবং জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরে দিশেহারা হয়ে ভুক্তভোগী নাসির প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর থেকেই র‌্যাব-৬ গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে এবং ঐ চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষে অভিযান অব্যাহত রাখে। এরা ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার গোপন তথ্যের মাধ্যমে তারা জানতে পারে যে, ঝিনাইদহ পৌর এলাকার আরাপপুরে প্রতারনা মামলার আসামি মাজেদুল অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্দেশ্যে র‌্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল ঐ দিন রাতেই তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। র‌্যাব জানান, আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব আরও জানান, এই জিনের বাদশা চক্রটি বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় গভীর রাতে অসহায় সহজ সরল দরিদ্র লোকদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিচ্ছে। মামলার বাকী আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানায় র‌্যাব এবং আসামী মাজেদুল কে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top