ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী ৫ম বারের মতো বিজয়ী হতে যাচ্ছেন: 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ শৈলকুপা আসন থেকে ৫ম বারের মতো বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুল হাই। এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩লক্ষ ৬ হাজার ৩ শত ৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লক্ষ ৫৩ হাজার ৫ শত ৭৭ ও মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৭শত ৫৯ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১শত সতের, মোট কক্ষের সংখ্যা ৬ শত ৮৬ টি। এখানে ১৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা ) সংসদীয় আসন ৮১ ।

এই আসন থেকে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তার মধ্যে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মনিকা আলম, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপি’র জাহাঙ্গীর মাজমাদার, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনিসুর রহমান, ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল, ফুলকপি প্রতীকে (নজরুল ইসলাম দুলালের স্ত্রী) মুনিয়া আফরিন। তবে আসনটির অধিকাংশ এলাকা ঘুরে ভোটারদের অনুভূতি থেকে জানা গেছে এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে নৌকো প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাই ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলালের মধ্যে।

শৈলকুপার ১৪টা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের পক্ষে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ১ নম্বর ত্রিবেণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিকান্দার আলী মোল্লা, ২ নং মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ, ৩ নং দিগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তপন, ৫ নম্বর কাচেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট মামুন জোয়ার্দার, ৬ নং সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন, ৭ নং হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ইকু শিকদার, ৮ নং ধলারচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, ৯ নং মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম, ১০ নং বগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল, ১১ নং আবাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তার আহমেদ মৃধা, ১২ নং নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন, ১৩ নং উমেদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবদার মোল্লা ১৪ নং দুধসর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন সাবু, ১৫ নম্বর ফুলহরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান বিপুল।

এছাড়া বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান হাকিম আহমেদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল নবী কালু, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হোসেন মোল্লা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিলুফা ইয়াসমিন ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা লিপি নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোটের মাঠে অবস্থান করছে।

অন্যদিকে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলালের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ১১ নম্বর আবাইপুর ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম দুলালের ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস ও সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন মোল্লা। সেই ক্ষেত্রে নজরুল ইসলাম দুলাল এই ইউনিয়ন থেকে বিজয়ী হবে বলে ইউনিয়নের জনসাধারণ মনে করছেন। তবে ১২ নম্বর ইউনিয়নে ট্র্যাক প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রবাল প্রতাপ থাকার ফলে এই ইউনিয়ন থেকে ট্র্যাক প্রতীকের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ১০ নম্বর বগুড়া ইউনিয়নে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন অত্র ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের অনুসারীরা। এই ইউনিয়নে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে নৌকা মার্কার প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া ৮ নম্বর ধলাহরাচন্দ্র ইউনিয়ন, হাকিমপুর ইউনিয়ন, মির্জাপুর ইউনিয়ন, দিগ নগর ইউনিয়ন, মনোহরপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবেন বলে সাধারণ জনগণের ধারণা।

শৈলকুপা পৌরসভার বর্তমান মেয়র আশরাফুল আজম নজরুল ইসলাম দুলালের পক্ষে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শৈলকুপা পৌরসভার ভোট ৩ ভাগের দুই ভাগ নৌকার দিকে যাবে বলে আশা করছেন নৌকার অনুসারীরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এখানে ৩টা সামাজিক দল রয়েছে তার মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণ করেন ওহিদুজ্জামান ইকু শিকদার ও অন্যটি নিয়ন্ত্রণ করেন তৈয়ব আলী খান। এরা দুইজনেই নৌকা প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের পক্ষে কাজ করছেন।

৬ নম্বর সারূটিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল মামুন নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও এখানে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন গোলাম কিবরিয়া টিপু। টিপু অনেক জনপ্রিয় হওয়ার কারণে এখানে ট্র্যাক প্রতিকের সাথে নৌকা প্রতীকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে তাদের ধারণা।

এছাড়া ৫ নম্বর কাচেরকোল ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করলেও এখানে তার প্রতিপক্ষ বাবলু জোয়ার্দ্দার ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের সাথে ট্রাক প্রতীকের হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

১ নম্বর ত্রিবেনী ইউনিয়নে নৌকার পক্ষে বর্তমান চেয়ারম্যান কাজ করলেও তার বিপক্ষে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তার বিপক্ষ প্রার্থী রেজাউল খাঁ। রেজাউল খাঁ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে রয়েছেন শক্ত অবস্থান। যার কারনে এই ইউনিয়নে ট্রাক প্রতীক সম্মানজনক ভোট পেলেও বিজয়ের সম্ভাবনা নৌকার।

শৈলকূপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু ট্রাক প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিলেও তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৯ নম্বর মনোহরপুর ইউনিয়নে তেমন সুবিধা করে উঠতে না পারার কারণে এই ইউনিয়ন থেকে ট্রাকের জয়ের সম্ভাবনা নেই।

১৩ নম্বর উমেদপুর ইউনিয়নে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সম্মানজনক ভোট লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে তবে বিজয়ের সম্ভাবনা নেই। ১৪ নম্বর ইউনিয়নে নায়েব আলী জোয়াদ্দারের এক সময়ের শক্ত অবস্থান থাকলেও বর্তমানে সে অবস্থা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। যে কারণে সে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কাজ করলেও ১৪ নম্বর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের জয়ের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে।

তবে ১৫ নম্বর ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ট্রাক প্রতীকের সাথে।

সবমিলে ১৪ টা ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাই আবারো বিপুল ভোটের ব্যবধানে ৫ম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top